সুব্রত বিশ্বাস, চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়: গরুপাচারে ধৃত বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে ১৪ দিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠাল আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। গরুপাচারে নেওয়া কোটি কোটি টাকা সতীশ কুমার কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখতেন, পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে, প্রভাবশালী যোগ এসব খতিয়ে দেখতে সতীশ কুমারকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে করেছে তদন্তকারী সংস্থাটি। এদিন আদালত তদন্তকারী সংস্থার আরজি মঞ্জুর করে সতীশ কুমারকে ১৪ দিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠায়।
তদন্তে অসহযোগিতা, সাক্ষীদের সাক্ষ্য না দেওয়ার হুমকি, প্রকৃত তথ্য গোপন করায় সতীশ কুমারকে মঙ্গলবার কলকাতায় গ্রেপ্তার করে সিবিআই। এদিকে, গরুপাচার নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও সিপিএমের বিমান বসু রাজ্য পুলিশ যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলেছেন। বিমানবাবু বলেন, “গরুগুলোতো আকাশ পথে যায়নি। রাজ্যের ভিতর দিয়ে গিয়েছে। পুলিশ কী করছিল।” এনিয়েও সিবিআইর কাছে তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। অন্যদিকে তৃণমূলের সুখেন্দু শেখর রায়ের কটাক্ষ, “ভোট এলে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।”
কয়েক মাস আগে সতীশ কুমারকে মূল অভিযুক্ত করে এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। গত ২০১৫ থেকে ‘১৭ মালদহ, মুর্শিদাবাদের বিএসএফের দায়িত্বে ছিলেন সতীশ কুমার। সেই সময়ে ২০,০০০ গরু সিজ হলেও কেউ ধরা পড়েনি, এমনকি কোনও গাড়ির জড়িত থাকার নাম নম্বর না থাকায় সিবিআইয়ের রাডারে চলে আসেন বিএসএফ ও বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সতীশ কুমার। তথ্য প্রমাণের সূত্রে তাঁকে মূল অভিযুক্ত করে এফআইআর দায়ের করে বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। বাংলাদেশে গরুপাচারে শুল্ক দপ্তরের অধিকারিকরাও জড়িত থাকায় সিবিআই মালদহ, মুর্শিদাবাদ, কলকাতায় তল্লাশি চালিয়ে বহু নথি আটক করে। মুর্শিদাবাদ শুল্ক দপ্তরে আটক গরুর নিলামকে ঘিরে চলতো অপরাধ জগতের নানা খেলা। বড় জার্সি গরুকে বাছুর দেখিয়ে নামমাত্র দাম দেওয়া হতো। এই কেনাবেচার মূলচক্রী এনামূল হক এজন্য ডিল প্রতি চল্লিশ লক্ষ টাকা দিত। এজন্য বড় ডিলে এনামুলের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন সতীশ কুমার ও অধস্তন বিএসএফ কর্তারা বলে জেনেছেন তদন্তকারী দল। পাচারে সহযোগী নানা ধরনের সিগন্যাল ও কোড নম্বরও ঠিক করে দিতেন ধৃত বিএসএফ কর্তা বলে সিবিআই সূত্রে খবর। বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা নিতেন সতীশ কুমার, বিএসএফ ও শুল্ক আধিকারিকরা। সেই টাকার হদিস পেতে বিএসএফ কর্তার আত্মীয়দের ব্যাংক নথি চেয়েছে সিবিআই বলে জানা গিয়েছে।
উত্তর ভারত-সহ দেশের ও রাজ্যের নানা প্রান্তের থেকে নিয়ে আসা গরু পাচারের আগে তাদের শরীরে নানা ধরনের কোড রং দিয়ে লেখা হতো। যা দেখে বিএসএফ ও শুল্ককর্মীরা বুঝে যেতেন রফার মাধ্যমে পাচার হওয়া গরু কোনগুলি। এজন্য তা আটক করা যাবে না। নদী পথে যে গরুগুলি পাচার হতো তাদের শরীরে লোহার ছেঁকা দিয়ে লেখা হতো কোড। বিড়ির আগুনে দেওয়া হতো অন্য পাড় থেকে সিগন্যাল। বিড়ি বা সিগারেটে টান দিলে অন্ধকারে তা বহু দূর থেকে দেখা যায়। এধরনের সিগন্যালে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি এসেছে সিবিআইয়ের নজরে বলে জানা গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র সক্রিয়। গরু পাচারের কিংপিন এনামূলকে গ্রেপ্তারের ক’দিন বাদেই সতীশ কুমারকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। এবার এই পাচারে যুক্ত প্রভাবশালীদের সন্ধানে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.