ফাইল ছবি।
শেখর চন্দ্র, আসানসোল: গরু পাচার মামলায় (Cattle Smuggling case) অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গল হোসেনের নামে-বেনামে আরও বেশ কিছু জমির হদিশ পেয়েছে সিবিআই (CBI)। কোটি কোটি টাকার জমি কেনাবেচা হয়েছে নগদমূল্যে। প্রায় ১৫ একর জমির রেজিস্ট্রিতে নেই মেমো বা কনফিগারেশন নোট। শুক্রবার আসানসোল আদালতে এই সংক্রান্ত মামলার নথিতে বীরভূমের জমি রেজিস্ট্রারের ভূমিকায় উষ্মাপ্রকাশ করলেন সিবিআই বিচারক। ওই রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত বলে মন্তব্য করলেন আসানসোল (Asansol)আদালতের বিচারক।
শুক্রবার সায়গলের নতুন সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য আদালতে জমা দিয়েছে সিবিআই। সাড়ে তিন কোটি টাকার এই সম্পত্তি সায়গলের স্ত্রী সোমাইয়া ও তার মা লতিফা খাতুনের নামে রয়েছে। এই মর্মে আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীকে জানান সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্য। বাজেয়াপ্ত করা এই সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জমির দলিল, পেট্রল পাম্প। সিবিআই জানিয়েছে, এই বিশাল সম্পত্তির একটা অংশ বীরভূমের (Birbhum) একটি পেট্রল পাম্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তদন্তে নেমে এই নিয়ে চতুর্থ পেট্রল পাম্পের হদিশ পেল সিবিআই।
এছাড়াও সায়গলের শ্যালকের নামেও একটি নির্মাণকারি সংস্থার খোঁজ মিলেছে। এখানেও বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এএনএম অ্যাগ্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেডের নামে একটি সংস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। যার ডিরেক্টর অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল ও বিদ্যুৎবরণ গায়েন। সংস্থার ৯৩ শতাংশ শেয়ার সুকন্যার এবং ৭ শতাংশ বিদ্যুৎবরণ গায়েনের বলে দাবি করেছে সিবিআই। এই কোম্পানির অ্যাকাউন্টে সাড়ে তিন কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এই সব তথ্য হাতে পেয়ে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জানতে চান বিদ্যুৎবরণ গায়েনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা? প্রত্যুত্তরে গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্য জানান, দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিচারক চাইলে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের তথ্য জমা দেন।
এই তথ্য দেখেই বোঝা যায় বিদ্যুৎবরণ গায়েনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই সিবিআই বেশ কিছু সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে। শুক্রবারের জমা করা নথিতে সিবিআই ‘ধর্মরাজ রাইস মিল’ নামে একটি চালকলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংস্থার কাগজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, এনামুলকে চাল বিক্রি করে টাকা পেয়েছে এই সংস্থা। যা আদপেই সত্যি নয় বলে দাবি সিবিআইয়ের। তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫ একর জমির সন্ধান মিলেছে। যার মূল্য বাজার দরের চেয়ে অনেক কম করে দেখানো হয়েছে। যার ফলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এসব দেখে ক্ষুব্ধ সিবিআই বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। উষ্মাপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ”অবাক কাণ্ড! মেমো আর কনফিগারেশন নোট ছাড়াই কোটি কোটি টাকার জমি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে? বোনাফাই মিসটেক কতটা হতে পারে? ওনাকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?” সিবিআই অফিসার জানান, “না হয়নি”। বিচারক বলেন, ”ওনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”
এদিন অনুব্রত ও সায়গলের ভারচুয়াল শুনানির কথা থাকলেও তিহাড় জেল (Tihar Jail) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গত ৩০ জুন ও এদিন পরপর দুটদিন ওই দুজনকে উপস্থিত না করায় ক্ষোভপ্রকাশ করেন আসানসোল আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। তিনি জরুরি ভিত্তিতে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে মেলের মাধ্যমে নির্দেশ দেন, আগামী ১০ আগস্ট যেন তাঁদের ভারচুয়ালি উপস্থিত করানোর ব্যবস্থা করা হয়। অনুব্রত ও সায়গলের আইনজীবীরা এদিন জামিনের আবেদন করেননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.