File photo
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: এবারও জামিন পেল না গরু পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এনামুল হক। এর আগে তথ্য সমৃদ্ধ ডায়েরির কথা উল্লেখ করে তার জামিন আটকে দিয়েছিলেন সিবিআই আইনজীবীরা। এবার এনামূলের হাওয়ালা যোগের প্রসঙ্গ তুলে জামিনের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবিরা।
বুধবার সকালে এনামুলকে আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগার থেকে পুলিশের কড়া পাহারায় আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে আনা হয়। সিবিআইয়ের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে সকাল থেকে এনামুল হকের আইনজীবীরা তার জামিনের হয়ে জোর সওয়াল করেন। তাঁরা দাবি করেন, এতদিন জেলে রেখে ও রিমান্ডে নিয়ে জেরা করে তাঁদের মক্কেলের কাছ থেকে এমন কিছুই সিবিআই পায়নি, যার থেকে প্রমাণ হয় যে এনামুল পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত। সিবিআই এখনও পর্যন্ত আদালতে এনামুল জড়িত থাকার কোনও প্রমাণও জমা দিতে পারেনি। আইনজীবীরা বিভিন্ন মামলার কথা বিচারকের কাছে বলেন। তাঁরা আবেদন করে বলেন, তাঁদের মক্কেল তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছে ও আগামী দিনেও করবে। তাই তাকে যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। তারা আরও বলেন, এই মামলায় তাঁদের মক্কেলের বিরুদ্ধে এমন সব ধারায় মামলা করা হয়েছে, সেগুলো সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। তার মক্কেল তো সরকারি কর্মী নয়, এছাড়াও, সিবিআইয়ের অফিসাররা জেরার সময় তার মুখ দিয়ে কিছু লোকের নাম বলানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন বা চেষ্টা করছেন। একইভাবে এনামুলকে নিয়ে এক মিডিয়া ট্রায়াল করার চেষ্টা করছে। এমন কিছু বলা বা লেখা হচ্ছে, তাতে এইসব কিছু মামলায় প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, সিবিআইয়ের আইনজীবী পালটা সওয়াল করে বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে এনামুলের মাধ্যমে কোটি কোটি হাওয়ালার টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এখনই জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করবে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে।” এদিন সওয়ালের সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারকের কাছে একটি ফাইল জমা দেন। বলা হয়, এই ফাইলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি আছে। আগের দিন বিচারককে সিবিআইয়ের আইনজীবী তল্লাশির সময় এনামুল হকের বাড়ি ফিরে পাওয়া একটি ডায়েরি দিয়েছিলেন। সেই ডায়েরিতে একাধিক প্রভাবশালীত্ব ব্যক্তিদের নাম আছে বলে সিবিআই দাবি করেছিল। যাদের এনামুল তার এই বেআইনি কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিত। কোটি কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা আছে এই ডায়েরিতে। সিবিআইয়ের আইনজীবীর দেওয়া ফাইলে কি আছে তা অবশ্য জানা যায়নি। সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারকের কাছে সওয়াল করে বলেন, তার জামিন নাকচ করে জেলে পাঠানো হোক।
শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের শেষে বিকেল চারটের পরে বিচারক এনামুল হকের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। বিচারক নির্দেশ দেন, আগামী ২১ জানুয়ারি এনামুল হককে আবার এজলাসে আনতে হবে। উল্লেখ্য, ৮ দিন জেল হেফাজতে থাকার পর বুধবারই সিবিআই আদালতে তোলা হয় এনামুলকে। গত ৩০শে ডিসেম্বর তাকে আদালতে তোলা হয়েছিল। সেদিন সিবিআই আইনজীবী এক ডাইরির কথা উল্লেখ করেছিলেন। দাবি করা হয়, ডাইরিটি তল্লাশি করে পাওয়া গিয়েছে এনামুলের বাড়ি থেকে। ডাইরিতে রয়েছে বহু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবশালীদের নাম। যারা এনামুলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। এই সওয়ালের ভিত্তিতেই সেদিন জামিন নাকচ হয়ে যায়। গত ৩০ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের আইনজীবীরা বিচারককে জানান, জেরার সময় এনামুল সিবিআইয়ের অফিসারদের হুমকি দিয়েছিল। তদন্তে সহযোগিতা করেনি। সে প্রভাবশালী। বাইরে বেরিয়ে গেলে তদন্তে প্রভাব পড়বে। এই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের শেষে বিচারক এনামূল জামিন নাকচ করে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর এনামূলের ফের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেপাজতের নির্দেশ দেওয়া হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.