ফাইল ছবি
সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ইলিশের (Hilsa)মরশুম শুরু হতে না হতেই সমুদ্র ছেঁচে ছোট ইলিশ ধরার অবৈধ কারবার শুরু হয়ে গেল সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায়। সোমবার রাতে নামখানা ও কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে এমনই খোকা ইলিশ বোঝাই বহু ট্রলার এসে ভিড়ল। ছোট ইলিশ ভরতি আরও প্রচুর ট্রলার বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) থেকে ইলিশবোঝাই হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ঘাটের দিকে ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবে একশ্রেণীর লোভী ও অসাধু ট্রলারমালিক ও ব্যবসায়ীর এহেন কাজে ক্ষুব্ধ মৎস্যজীবীদের এক বড় অংশ। নিজেদের ব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন, এই সময়ের মধ্যে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে প্রতি বছরের মতো এবছরেও ছিল সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সেই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পেরতেই গত ১৫ জুন কাকদ্বীপ (Kakdwip), নামখানা, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, ফ্রেজারগঞ্জ ও ডায়মন্ড হারবার মৎস্যবন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয় একের পর এক ট্রলার (Traller) ও ট্রলি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে মৎস্যজীবীদের ৯০ সেন্টিমিটারের কম ফাঁসযুক্ত জাল ব্যবহার করা ও ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সোমবার রাতে কাকদ্বীপ ও নামখানা মৎস্যবন্দরে ভেড়া সমুদ্রফেরত বহু ট্রলার ও ট্রলিতে ১৫০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের ৩০ টন ইলিশ আসে। সেগুলি রাতেই ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রবাজার মাছের আড়তে বিক্রিও হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে।
এমন ছোট ইলিশ বোঝাই আরও ট্রলার বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ ধরে নামখানা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, ফ্রেজারগঞ্জ-সহ বিভিন্ন ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতির অভিযোগ, কোনওরকম নজরদারি ছাড়াই ইলিশ মরশুমের শুরুতেই যেভাবে এক শ্রেণির অসাধু ট্রলার মালিক ও কারবারী অধিক মুনাফা লাভের আশায় ছোট ইলিশ ধরার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন তা ক্রমশই দ্রুত রাজ্যের মৎস্য শিল্পের উপর ভয়ংকর আঘাত হানতে চলেছে। তিনি জানান, এদিন ৫০ টি ট্রলারে সোমবার রাতে বড় ইলিশ এসেছে মাত্র ২ টন। যেখানে ১০ টি ট্রলার ৩০ টন ছোট ইলিশ নিয়ে ভিড়েছে। আরও প্রচুর ট্রলার সমুদ্র থেকে ছোট ইলিশ ধরে মঙ্গলবার বিভিন্ন ঘাটে ভিড়বে।
ইতিমধ্যেই যে সমস্ত ছোট ইলিশভরতি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে, তার মধ্যে খোকা ইলিশ তো রয়েছেই, এমনকী হাতের তালুর আকৃতির ও মোবাইলের আকৃতির ইলিশও অধিক পরিমাণে ধরা হয়েছে বলে খবর। অভিযোগ, মোহনা থেকে সমুদ্রে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম না করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ট্রলিনেট ব্যবহার করে শুধু ছোট ইলিশ নয়, সমুদ্র ছেঁচে তুলে নিচ্ছেন বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য ছোট মাছ। প্রজননে বাধা পেয়ে ক্রমে সমুদ্রে স্বাভাবিকভাবেই কমে যাচ্ছে ইলিশ-সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের সংখ্যাধিক্য।
বিষয়টি মৎস্যদপ্তরের নজরেও এনেছেন তিনি। তাঁর কথায়, অবিলম্বে প্রশাসন এই অবৈধ কারবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্রে শেষ হবে ইলিশ-সহ অন্যান্য মৎস্যভাণ্ডার। মাছেভাতে বাঙালির ইলিশ রসনা হয়ত চিরকালের জন্যই অতৃপ্ত থেকে যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.