ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরভ মাজি: ব্যঙ্গচিত্রে শুভেন্দুর ‘নিরুদ্দেশ সংবাদ’। প্রায় গোটা রাজ্যজুড়ে হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূল কংগ্রেস সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেলের এই হোর্ডিংয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম উল্লেখ করা হয়নি বা কোনও ছবি ব্যবহার করা হয়নি। যদিও ব্যঙ্গচিত্র রয়েছে। এই হোর্ডিংয়ের তীব্র আপত্তি জানিয়ে সরব হয়েছে বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার নেতৃবৃন্দ। এমনকী বুধবার এই হোর্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে ‘লাইভ’ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়িয়েছেন বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায়।
বুধবার দুপুর থেকে বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বর, পারবীরহাটা মোড়-সহ তিনটি জায়গায় এই হোর্ডিং লাগানো হয়েছে। তাতে শিরোনাম করা হয়েছে, নিরুদ্দেশ সংবাদ। তারপর কোনও নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে যেভাবে পোস্টার লেখা হয় সেইভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে, রূপ: দেখতে গোলগাল, নাদুসনাদুস। মেরুদণ্ড নেই। গলায় গেরুয়া উত্তরীয়। ঠিকানা: বাড়ি কাঁথিতে। অসুখেরও উল্লেখ রয়েছে সেখানে। লেখা হয়েছে, অসুখ: ভোট এলেই লাইট বন্ধ করে দেন। নিয়মিত দুশো দুশো চিৎকার করে মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে পড়েন। অকারণ ভাট বকতে ভালবাসেন। ডিসেম্বরে সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন, তারপর লজ্জাবতী হয়ে মুখ লুকোন। ক্যামেরায় ঠোঙা মুড়িয়ে ঘুষ নিতে দেখা যায়। এখানেই শেষ নয়। হোর্ডিংয়ে আরও লেখা হয়েছে, বিশেষ চিহ্ন: অভিষেক শব্দটি শুনলেই দাঁত খিঁচিয়ে কামড়াতে আসেন। বেগম বেগম করে হেঁচকি তোলেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হলে বিরোধিতা করেন, কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়লে চুপ থাকেন। পাশে একটি কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে নিচে লেখা রয়েছে, এমন কোনও ব্যক্তিকে খুঁজে পেলে দ্রুত সন্ধান দিন।
হোর্ডিং প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপির জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায়, যুব মোর্চার জেলা সভাপতি পিন্টু সাম-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতারা পারবীরহাটা এলাকায় ছুটে আসেন। প্রতিবাদে সরব হন। তৃণমূলের এই কাজকে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি বলে সরব হন তাঁরা। শ্যামল রায় বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী যতদিন ওদের দলে ছিল তখন ভাল ছিল। এখন বিরোধী দলনেতা হয়ে তৃণমূলের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। আর তাই এখন এমন কুৎসা করছে।” এরপরই তিনি পালটা হোর্ডিং টাঙানোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “অবিলম্বে এই হোর্ডিং খোলা না হলে বৃহস্পতিবার আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে পোস্টার দেবো। তখন সামলাতে পারবে তো তৃণমূল।” একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে বেশ কিছু কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন ওই বিজেপি নেতা। “ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি তো কলা খায়নি।” বিজেপির হোর্ডিং নিয়ে হইচইকে এভাবেই ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল।
গত ১ ডিসেম্বর দেবাংশু ভট্টাচার্যকে তৃণমূল সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেলের রাজ্যের ইনচার্জ করে দল। তারপর গোটা রাজ্য এই হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ। দেবাংশুর বক্তব্য, “আমরা কারও নাম করছি না। কিন্তু ১২, ১৪ আর ২১ তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পর একজনের কথা খুব মনে পড়ছে। দু-তিন মাস ধরে বড় বড় হুংকার দিচ্ছিল এক ব্যক্তি। হঠাৎ করে সেই ব্যক্তি কোথায় হারিয়ে গেল? সাধারণ মানুষ নিজ দায়িত্বে সেই ব্যক্তিকে খুঁজে দেবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.