সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে আলিপুর আদালতে ভাগাড় কাণ্ডের চার্জশিট জমা দিতে পারল না সিআইডি। পাশাপাশি নির্ধারিত সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ভবানীভবনে এই কাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারলেন না রাজ্য ফরেনসিক দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণে টানা তিন মাস জেলে থেকেও এবার জামিনে মুক্তি পেতে চলেছে ভাগাড় কাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত ‘মাংস বিশু’ ওরফে বিশ্বনাথ ঘোড়ুই। আগামী সপ্তাহেই সে জামিন পেতে চলেছে বলে আলিপুর আদালতের জল্পনা। চার্জশিট জমা না পড়ায় মামলা দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই এই কাণ্ডের আটজন অভিযুক্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। এমনকী, বৃহস্পতিবারও জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় ভাগাড় কাণ্ডের অন্যতম ধৃত ‘লিঙ্কম্যান’ সানি মল্লিক। শুধু তাই নয়, চার্জশিটের অভাবে মামলা দুর্বল হওয়ার কারণে অভিযুক্তদের জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে জোরাল সওয়ালও করতে পারছেন না সরকার পক্ষের আইনজীবী নবকুমার ঘোষ।
গত ১৯ এপ্রিল বজবজ ভাগাড় কাণ্ডের তদন্ত শুরু করে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ। এই কাণ্ডের তদন্তে গঠিত হয় ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দল। তদন্তে নেমে একে একে ‘মাংস বিশু’-সহ মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে ‘সিট’। কিন্তু প্রমাণের অভাবে গ্রেপ্তারের পরেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় ধৃত প্রদীপ রায় ও সামসুল ইসলাম। এরপরে জামিন পায় রাজা মল্লিক ও ভিকি সাইমন্স। ‘মাংস বিশু’কে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নারকেলডাঙা ও মানিকতলার দু’টি হিমঘর থেকে প্রচুর মরা পশুর পচা মাংস বাজেয়াপ্ত করে। পরীক্ষার জন্য সেগুলিকে পাঠানো হয় রাজ্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে। সেই পরীক্ষার রিপোর্টও এখনও পর্যন্ত ভবানীভবনে জমা পড়েনি।
[ রামের পাশেই রহিম, মৃত হনুমানের সমাধি তৈরিতে এগিয়ে এলেন মুসলিমরাও ]
যে গাড়িতে চাপিয়ে ভাগাড়ের পচা মাংস কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন রেস্তরাঁ ও হোটেলে সরবরাহ করা হত সেই গাড়ি পরীক্ষা করে দেখেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষার রিপোর্ট ভবানীভবনে এসে পৌঁছেছে। সেই রিপোর্ট আদালতের কাছেও জমা দিয়েছে সিআইডি। তাতে বলা হয়েছে, গাড়ির মধ্যে মাংসের পচা গন্ধ পরীক্ষায় মিলেছে। কিন্তু সেই মাংস এতটাই পচে গিয়েছিল যে তা পরীক্ষা করা যায়নি। কিন্তু নারকেলডাঙা ও মানিকতলার হিমঘর থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া মাংসের পরীক্ষার রিপোর্ট দু’মাস পরেও ভবানীভবনে কেন এসে পৌঁছাল না, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিআইডির গোয়েন্দাকর্তারা।
চার্জশিট ও ফরেনসিক রিপোর্টের অভাবে মামলা দুর্বল হয়ে পড়ায় এই কাণ্ডে ধৃত বজবজ পুরসভার দুই কর্মী আগেই জামিন পেয়ে যায়। বুধবার জামিন পেয়ে যায় ইয়ং চাই, মহম্মদ ফিরোজ আহমেদ, সারাফত হোসেন, মহম্মদ গোলা ও উত্তর ২৪ পরগনার সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর মানিক মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার জামিন পেয়ে যায় সানিও। এখন শুধুমাত্র জামিনের অপেক্ষায় জেলে দিন গুনছে ‘মাংস বিশু’ এবং সিকান্দার আলি। আদালত সূত্রে প্রকাশ, গত ৩ মে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিশুকে। আগামী বুধবার বিশু ও সিকান্দারের গ্রেপ্তারের ৯০ দিন শেষ হচ্ছে। অর্থাৎ, বুধবারের মধ্যে ভবানীভবনে ফরেনসিক রিপোর্ট না এলে এবং আলিপুর আদালতে এই কাণ্ডের চার্জশিট জমা না পড়লে আগামী বৃহস্পতিবারই বিশু ও সিকান্দারের জামিনের জন্য আবেদন জানাবেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের দৃঢ় আশা, ওই দিনই জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবে বিশু ও সিকান্দার। সিআইডির গোয়েন্দাকর্তারা জানিয়েছেন, ফরেনসিক রিপোর্ট না আসায় এই কাণ্ডের চার্জশিট জমা দেওয়া যাচ্ছে না আদালতে। তাই একে একে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। ফরেনসিক রিপোর্ট এলে সেই জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন গোয়েন্দারা।
[ কোচবিহারে ছাত্র খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার তৃণমূল নেতা মুন্না খান ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.