দেবব্রত মণ্ডল, ডায়মন্ড হারবার: কথায় আছে, “ডাক্তার ভগবানের সমান।” আর এই কথা যে একবিন্দুও ভুল নয়, বৃহস্পতিবার তার প্রমাণ পেল ক্যানিং। আশঙ্কাজনক এক রোগীর দরকার ছিল বি-পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। কিন্তু লকডাউনের (Lockdown) কারণে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে রক্তের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। অগত্যা রোগীকে বাঁচাতে সুপার নিজেই গাড়ি নিয়ে ক্যানিং থেকে ছুটলেন বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সুপার চিকিৎসক অপূর্বলাল সরকারের এই মানবিক রূপের প্রশংসা করছেন সকলে।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল সূত্রের খবর, সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের জ্যোটি রামপুর গ্রামের বধূ শ্রীমতি মণ্ডল গর্ভপাতের জন্য এলাকার এক কোয়াক চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খান। এরপর রবিবার থেকে শুরু হয় ওই মহিলার রক্তক্ষরণ। অবস্থা বেগতিক বুঝে ওই কোয়াক চিকিৎসক বধূকে গোসাবা ব্লক হাসপাতালে ভরতি করানোর নির্দেশ দেন। দু’দিন গোসাবা হাসপাতালে থাকার পরও বধূর অবস্থার এতটুকুও উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে। ফলে সেখানে থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, রোগীর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একেবারে কমে গিয়েছে। প্রয়োজন পাঁচ ইউনিট রক্তের। কিন্তু ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে মাত্র এক ইউনিট রক্ত থাকায় সমস্যা দেখা দেয়।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১১ টা বেজে গিয়েছে। কিন্তু রক্ত কোথাও নেই। সবথেকে কাছের ব্লাডব্যাংকও যাতায়াতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার! কী উপায়? সেই সময়ই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সুপার। বারুইপুর থেকে নিয়ে আসেন ওই নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত। রাতেই রক্ত দেওয়া হয় ওই বধূকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মহিলার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এবিষয়ে ক্যানিং মহাকুমা হাসপাতালে সুপার চিকিৎসক অপূর্বলাল সরকার বলেন, “সুন্দরবনের মানুষেরা অসহায় অবস্থায় প্রত্যেকদিন হাসপাতালে আসেন। আর যে অবস্থায় এই রোগীকে নিয়ে আসা হয়েছিল তাতে রক্ত ভীষণ দরকার ছিল। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে মারাত্মকভাবে রক্তের চাহিদা বাড়লেও সেভাবে জোগান নেই। আর ওই রোগীর সঙ্গে এমন কেউ ছিল না, যিনি গিয়ে কোথা থেকে রক্ত আনতে পারবেন। রাতে যাবেনই বা কোথায়! সব বুঝে শুনেই রোগীকে বাঁচাতে আমিই রওনা দিলাম।” চিকিৎসা পরিষেবা, চিকিৎসকদের আচরণ নিয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। যার জেরে মাঝে মধ্যেই ডাক্তারদের আক্রান্তও হয়ে হয়। এই পরিস্থিতিতে এই ঘটনা যেন চিকিৎসকদের অন্য রূপ দেখাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.