দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যানিং স্টেডিয়ামকে রাতারাতি বানানো হল একশো বেডের হাসপাতাল। শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্যই এই হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই ৫০টি বেড রেডি করা হয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য। আর কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে কাজ করতে শুরু করবে এই হাসপাতালটি।
সোমবার বিভিন্ন জেলার জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে এবং জেলাশাসকদের সঙ্গে নিয়ে একটি ভিডিও কনফারেন্স করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ভিডিও কনফারেন্সে মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরবন এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বারবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তীর মানুষদের জন্য কোথায় হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হল। এলাকায় বড় কোনও নার্সিংহোম না থাকার কারণে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলেন, ক্যানিং স্টেডিয়ামটিকে হাসপাতাল হিসেবে তৈরি করতে। আর সেই মতো শুরু হয়েছে কাজ । অন্যদিকে, সোনারপুরের লিভার ফাউন্ডেশনকে নেওয়া হয়েছে অন্য আরেকটি হাসপাতাল বানানোর জন্য।
জেলা প্রশাসনের মতে, ক্যানিং স্টেডিয়ামটি পুরোমাত্রায় হাসপাতালের কাজ শুরু করলে সুন্দরবন এলাকা যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা বাইরে থেকে এসে এখন এলাকায় আছেন তাদের যদি কোনওরকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তাহলে সেখানে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। আর তাদের কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। মঙ্গলবার এই হাসপাতালের কাজ খতিয়ে দেখতে ক্যানিং স্টেডিয়ামে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, ক্যানিং পশ্চিম এর বিধায়ক শ্যামল মন্ডল ক্যানিংয়ের মহকুমা শাসক বন্দনা পোকরিয়াল, ক্যানিংয়ের বিডিও নীলাদ্রি শেখর দে, এবং ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সুপার অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় প্রমূখ।
ইতিমধ্যেই ক্যানিং স্টেডিয়ামে তৈরি মহকুমার প্রথম করোনা হাসপাতালটিকে দ্রুত কাজ শুরু করানোর জন্য যথেষ্ট তৎপর স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে প্রশাসনের আধিকারিকরা। বর্তমানে স্টেডিয়ামের মধ্যে থাকা কুড়িটি ঘরকে ব্যবহার করা হবে বলে জানা গিয়েছে। সেখানেই করোনা সন্দেহে যদি কেউ চিকিৎসার জন্য আসে তাহলে তাদেরকে ল্যাবরেটরির মাধ্যমে টেস্টিংয়ের ব্যবস্থা যেমন থাকবে তেমনি থাকছে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও। প্রথম পর্যায়ে ৫০টি বেড তৈরি করা হয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য। এরপর সেখানে লাগানো হবে ছটি ভেন্টিলেশন। থাকছে সিসিইউয়ের ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ক্যানিং হাসপাতালে পাশেই স্টেডিয়ামটিকে হাসপাতাল তৈরি করে ফেলেছি। আগামী দিনে এখানেই আরও বড় করে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে যাদের আনা হবে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। মূলত পুরো কাজটাই করা হলো মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে।’ সুন্দরবন থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করতে যান ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায়। কয়েক হাজার শ্রমিক এখনও আটকে আছেন দিল্লি, মুম্বই বা পুণেতে। শুধু তাই নয় ইতিমধ্যে প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক ফিরেও এসেছেন সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে দ্বীপে।তাদের মধ্যে এখনও করোনার খবর পাওয়া না গেলেও আগামী দিনে যদি সমস্যা তৈরি হয় তার মোকাবিলার জন্য এই হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে।
ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার তার বিধায়ক কোটার ১২ লক্ষ টাকা জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই টাকা দিয়ে করোনা আক্রান্ত হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যন্ত্রপাতি সামগ্রী কেনা হবে বলে জানান বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.