সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুরনো দলের প্রতি আনুগত্য নাকি আনুগত্যের কারণে পুরস্কারের লোভ? আর তা না পেলেই নিমেষে দলের প্রতি দায়িত্ব, ভালোবাসা ভেঙে খানখান? চব্বিশের লোকসভা ভোটের রেজাল্ট আউটের পর কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে এসব প্রশ্ন তো সামনে আসছেই। আঙুল উঠছে সেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দিকে, যাঁরা স্রেফ সংসদে যাওয়ার টিকিট প্রাপ্তির ‘লোভে’ হেলায় দীর্ঘদিনের দল ছেড়ে ‘শত্রু’শিবিরে চলে যেতেও কসুর করেননি। অথচ বিধি বাম! টিকিট পেলেও সংসদে যাওয়া তাঁদের হল না। জনতার রায়ে পরাস্ত দলবদলকারী বেশ কয়েকজন প্রার্থী। জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে জনতা কোনও ভুল করলেন না। এই পরাজয় থেকে কি শিক্ষা নেবেন দলবদলকারীরা?
বাংলার ৪২ আসনের মধ্যে এবারের লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election 2024) শাসকদল তৃণমূলের জয় হয়েছে ২৯ আসনে। বিজেপি (BJP) জিতেছে ১২টি এবং কংগ্রেস জয়ী এক আসনে। ঘাসফুল এবং পদ্ম শিবিরে এমন অনেক প্রার্থীই রয়েছেন, যাঁরা শেষ মুহূর্তে দলবদল করে লোকসভায় লড়াইয়ের ছাড়পত্র পেলেও বাজিমাত করতে পারেননি। যুদ্ধ করেও ‘নিষ্ফলের হতাশের দলে’ই থাকতে হল তাঁদের। সেই তালিকায় অন্তত পাঁচজনের নাম বলাই যায়। একবার দেখে নেওয়া যাক কারা সেই হতভাগ্য, যাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে হতেও নিভে গেল।
এই তালিকায় নিঃসন্দেহে প্রথম মনে পড়ে তাপস রায়ের (Tapas Roy) নাম। বরানগরের প্রাক্তন বিধায়ক, বর্ষীয়ান রাজনীতিক তৃণমূলের দীর্ঘদিনের ভরসাযোগ্য সঙ্গী ছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে তাঁর বাড়িতে ইডি তল্লাশির পরই আচমকা মন বদলে ফেলেন তাপস রায়। যত রাগ গিয়ে পড়ে স্বয়ং দলনেত্রীর উপরই। তাপস রায়ের অভিমান ছিল, দলের অন্য নেতাদের বাড়িতে ইডি হানা নিয়ে সরব হলেও তাঁর বেলায় নীরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেই রাগ থেকে তৃণমূল ত্যাগের সিদ্ধান্ত এবং পদ্মশিবিরে যোগদান। খাস কলকাতার এমন এক নেতার উপর ভর করে কলকাতা উত্তর (Kolkata Uttar) জয়ের স্বপ্ন দেখে বিজেপিও। তাপস রায়কে প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির। বিপক্ষে তৃণমূলের বরাবরের সৈনিক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর কলকাতা এবার তাপস-সুদীপের টানটান লড়াই দেখল। কিন্তু শেষরক্ষা আর হল না। সুদীপের কাছে হারলেন তাপস।
দ্বিতীয় নাম অবশ্যই বারাকপুরের (Barrackpore) ‘বাহুবলী’ নেতা অর্জুন সিং। তাঁর ক্ষেত্রে যা ঘটল, তা ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’ বললেও অত্যুক্তি হয় না। উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগেও তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে সোজা বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন অর্জুন (Arjun Singh)। জিতে সাংসদও হন। তার বছর দুয়েক পর গেরুয়া শিবির ছেড়ে ফিরে আসেন তৃণমূলে। চব্বিশে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে বিজেপিতে চলে যাওয়া এবং টিকিট আদায়। কিন্তু এবার আর শিকে ছিঁড়ল না। হেরে গেলেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের কাছে।
রানাঘাটের (Ranaghat) মুকুটমণি অধিকারী আর রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণীরও একই ব্যাপার। কৃষ্ণ কল্যাণী গেরুয়া শিবিরে সদস্য হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন। পরে দল বদলে চলে আসেন তৃণমূলে। রায়গঞ্জে (Raiganj) জয়ের স্বাদ পেতে চব্বিশের লোকসভায় তাঁকেই প্রার্থী করে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু বিধানসভা জিতলেও লোকসভায় আর যাওয়া হল না কৃষ্ণ কল্যাণীর। বিজেপির কার্তিক পালের কাছে পরাজিত হলেন তিনি। আর মুকুটমণি অধিকারী তো প্রার্থী ঘোষণার দিন কয়েক আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। রানাঘাট দক্ষিণের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক চিকিৎসক মুকুটমণির দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল, দিল্লির লড়াইয়ের সৈনিক হওয়া। পদ্ম শিবিরে সে সুযোগ মেলেনি। তাই তৃণমূলে আসা এবং রানাঘাট থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাপূরণ। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বিজেপির বিদায়ী সাংসদ জগন্নাথ সরকারের কাছে পরাজিত হয়েছেন তিনি।
এই তালিকায় আরেকজন বনগাঁ (Bongaon) লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিট পাওয়া বিশ্বজিৎ দাস। একুশের বিধানসভা ভোটে বাগদা থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। পরে দলবদল করেন। ছেড়ে দিতে চান বিধায়ক পদও। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ মেনে তা করেননি। পরে, চব্বিশের ভোটে তাঁকে বনগাঁর মতো গুরুত্বপূ্র্ণ কেন্দ্র থেকে ঘাসফুল শিবির প্রার্থী করায় বিশ্বজিৎবাবু বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু লোকসভার লড়াইয়ে পরাস্ত তিনি। বিধায়ক পদও আর নেই। ফলে এখন তাঁর ‘হাতে রইল পেনসিল’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.