তরুণকান্তি দাস ও রাহুল চক্রবর্তী: দোলের রঙে রাঙা হবে কি ভোট রাজনীতি? সবুজ-লাল-গেরুয়া রঙে ভরে যাওয়া আকাশে কি পাক খাবে ভোটের হাওয়া? সহজ প্রশ্নের উত্তর আরও সহজ। রাত পোহালেই দোল। আর কিছুদিন পরেই ভোট। তাই মিলনের উৎসবে ভোট-মিলান্তি যে বড় হয়ে উঠবে তাতে আর সন্দেহ নেই।
পুজোর ঢাক বাজতে এখনও ঢের দেরি। কিন্তু শহর কলকাতা থেকে গ্রামের অলিগলিতে বাজছে ভোটের ঢাক। ১০ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার দিন তিনেকের মধ্যে থেকেই ঢাকের তালে কানে বাজছে লোকসভা নির্বাচনের আগমনির সুর। আর এবার তার সঙ্গেই মিলে গিয়েছে রঙের উৎসব। বৃহস্পতিবার দোল। শুক্রবার হোলি। ফলে ভোটের ভরা মরশুমে জনসংযোগের সেরা সুযোগকে প্রার্থীরা কাজে লাগাবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রার্থীরা রাঙা হবেন ভোটারদের আদরের রঙে। পছন্দ হোক বা না হোক ভোট টানতে এই সময় যে কোনও রং-ই গায়ে মাখতে কসুর করবেন না প্রার্থীরা। আর এবার দেশের সরকার গঠনের নির্বাচন। ফলে ভোটারদের রং মাখানোর আবদারে না নেই প্রার্থীদের।
[ দলের প্রতি অভিমান, ভোটের মুখে গুসকরায় প্রচার বিমুখ তৃণমূলের একাংশ ]
এই রঙিন ছবিটা বুধবার সকাল থেকেই দেখা গিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় এদিন সকাল থেকেই দোল উৎসবে মেতে ওঠেন। কচিকাঁচাদের সঙ্গে আবির খেলেন। নিজেও আবির মাখান। আবার কেউ আবির মাখাতে এলে তাঁকেও সাদরে গ্রহণ করেছেন। প্রার্থীর বক্তব্য, “দোল আর হোলিতে এলাকার মানুষের সঙ্গে আরও বেশি করে জনসংযোগ হবে। যেহেতু ছুটি থাকে, তাই অনেক মানুষের কাছেই পৌঁছনো যাবে।” প্রায় একই ছবি দেখা গিয়েছে রায়গঞ্জেও। এছাড়া মালদহ উত্তরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মৌসম নুর রং খেলে এলাকার মহিলাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে নাচ করেন। রং মেখে প্রচার করেন বারাসতের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারও।
এদিন সকাল থেকেই জোরকদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি। তাঁকেও দেখা গিয়েছে কলেজ পড়ুয়াদের সঙ্গে সেলফি তুলতে, আবির মাখতে। বিকেলেই ঘাটালে কর্মিসভা করেন অভিনেতা তথা তৃণমূলের প্রার্থী দেব। সেখানেও ওড়ে সবুজ আবির। কর্মীদের দাবি, রাত পোহালে দোলের দিন যদি নায়ক কিছুটা হলেও সময় দিতে পারেন তাঁদের। একইভাবে বসিরহাটের প্রার্থী নুসরত ও যাদবপুরের প্রার্থী মিমির কাছেও আবদার করেছেন কর্মীরা। স্থানীয় নেতারাও চাইছেন, প্রার্থী এসে মিশে যান জনতার মাঝে। রং ছড়ান তাঁরা। যে রঙের ছটায় আলো জ্বলবে ইভিএম-এ। আসলে এই দিনটায় টলিউডে নিজেদের মধ্যে রং মাখামাখি করে কাটান রূপোলি পর্দার নায়ক-নায়িকারা। তাই তাঁদের সবার পক্ষে যাওয়াটা সম্ভব নয়। তবু চেষ্টার ত্রুতি থাকছে না।
[ রাজনৈতিক বিরোধের জেরে একঘরে পরিবার, বিচার চেয়ে থানার দ্বারস্থ বধূ ]
দোলের দিনে আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন কলকাতায় পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাবেন। তবে দোলের দিনে আবির মেখে জনসংযোগ সারবেন আসানসোলের সম্ভাব্য বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। বৃহস্পতিবার আসানসোলের শতাব্দী পার্কে বিজেপি পরিচালিত বসন্তোৎসব হওয়ার কথা। সেখানেই নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে পরামর্শের পাশাপাশি থাকছে দলের নেতা-কর্মীদের গেরুয়া রংয়ে রাঙিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি। থাকছে দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ব্যাপক খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। রাজ্যের আরেক তারকা প্রার্থী তৃণমূলের শতাব্দী রায় এবার দোলের দিনে তারাপীঠে কাটাবেন। সেখানে তারাপীঠের সেবাইত সংঘের আয়োজনে একটি বসন্তোৎসবে অংশ নেওয়ার কথা তাঁর।
তবে স্থানীয় নেতা-নেত্রীরা এই দু’দিন রাস্তায় বেরবেন। আবির মাখবেন ও মাখাবেন। আর তার সঙ্গেই চলবে ভোটের প্রচার। কিন্তু এখানে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস থেকে ঢের পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি। এখনও তারা প্রথম দফার ভোটের জন্যও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি। ফলে কর্মীরা রাস্তায় থাকলেও প্রার্থীরা গেরুয়া রং নিয়ে আদৌ বেরতে পারবেন কি না, তার উত্তর মিলবে সন্ধ্যার পর। তবে যাইহোক, ভোটের প্রচার পর্বে মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ‘মেগা টু’ডেজ’-কে ছাড়তে রাজি নয় শাসক-বিরোধী কেউই। কোন রঙের আবির বেশি উড়ল, উত্তর দেবে শনিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.