টিটুন মল্লিক,বাঁকুড়া: ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘ফ্যামেলিয়াল অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস’। অর্থাৎ বৃহদন্ত্রে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিউমার। সেই টিউমার থেকে ক্যান্সারের সংক্রমণ ছড়ায় অন্ত্রে। মেডিক্যাল জার্নাল বলছে সারা বিশ্বে ২৫ থেকে ৭০ হাজার মানুষের মধ্যে একজনের হয় এই রোগ। এমন জটিল রোগের সফল অস্ত্রোপচার হল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রোগীর পেট থেকে বের হল কয়েক লক্ষ টিউমার।
[যুগান্তকারী আবিষ্কার, ক্যানসার প্রতিরোধ করছে মুরগির ডিম!]
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি শুভেন্দু বিকাশ সাহানা বলছেন ‘আমার সার্জারি জীবনের অভিজ্ঞতায় এধরনের বিরল রোগ আগে কখনও দেখিনি। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কমে যায় শরীরে। সেই কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাও ছিল না।’ শুভেন্দুবাবুর নেতৃত্বেই এই রোগে আক্রান্ত বীরভূমের সাগরভাঙা পাড়ার বাসিন্দা ওয়াসরুল শেখের সফল অস্ত্রোপচার হল। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে এধরনের অপারেশন বিরল। পুজোর মরশুমে যখন সহকর্মীদের অধিকাংশই উৎসবে মশগুল তখন বাঁকুড়া মেডিক্যালের সার্জারি বিভাগের ইউনিট ৪ এর চিকিৎসকরা অসাধ্যসাধন করলেন। একেবারে নামমাত্র পরিকাঠামো নিয়ে তাদের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে।
[বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েও ৪১ দিন বেঁচে এই শিশু, মিরাকলের আশায় বাবা-মা]
সফল টিম ওয়ার্ক। পাশাপাশি একশো শতাংশ দেওয়া। তার ফলেই ওয়াসরুলের জটিল রোগের চিকিৎসা হল। বছর পঁয়তাল্লিশের ওয়াসরুল সাহেব বলেন, ”আমার পক্ষে কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না। আমার আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের পরামর্শে কষ্ট করে কলকাতা থেকে কোলনোস্কোপি করাই। ওই রিপোর্ট থেকে ওই বিরলতম রোগের হদিশ পান চিকিৎসকরা।” রোগী ও তার আত্মীয়দের অনুরোধ ফেরাতে পারেননি শল্য চিকিৎসক এবং বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি। সরকারি খরচে শুভেন্দুবাবু নিজেই এই জটিল শল্য চিকিৎসার জন্য নানারকম ইনসট্রুমেন্ট জোগাড় করেন। এর পর রক্ত দিয়ে স্বাভাবিক করা হয় তার হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ। শেষপর্যন্ত সফল অপারেশন হয়। অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, ”এমন ঘটনা প্রথম। বাদ দেওয়া হয় কয়েক মিলিয়ন টিউমার-সহ বৃহদন্ত্রের অংশ। ক্ষুদ্রান্ত্র দিয়ে তৈরি করা হয় ‘পাউচ’ নকল রেকটাম। আমাদের চিকিৎসক টিম সাফল্যের সঙ্গে অস্ত্রোপচার করেছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের।” সাগরভাঙা পাড়ার ওই বাসিন্দা কয়েক মাস ধরে পেটে ব্যাথা আর পেটের গোলমালে ভুগছিলেন। বিরল এই অস্ত্রোপচার নিয়ে দুর্ভাবনায় ছিল ওয়াসরুলের পরিবার। শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়া মেডিক্যালের মানবিক মনোভাবের কারণে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.