সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মাটির একচিলতে ঘরেই ক্যানসার আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে কোনওরকমে দিন কাটছিল। আমফান (Amphan) কেড়ে নিল সেটুকুও। ঝড়ে উড়ে গেল ঘরের চালা। কোথায় ক্ষতিপূরণ? পাওনা বলতে পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া মাত্র একখানা ত্রিপল। তা দিয়েই হেলে পড়া ঘরের চাল ঢেকেছেন কোনওরকমে। যেন ছেঁড়া কাপড়ে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। ডায়মন্ডহারবারের রত্নেশ্বরপুরের ক্যানসার আক্রান্ত বাসিন্দা মিঠু রক্ষিতের নাম রয়েছে আমফানের দুর্গতদের তালিকায়। ফলে সরকারি সাহায্য পাওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু তা মেলেনি। শুধু তাই নয়, ত্রাণসাহায্যের দায় এড়িয়েছে পঞ্চায়েত। কানপুর-ধনবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুজল ভাণ্ডারী জানান, আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় মিঠু রক্ষিতের নাম রয়েছে। তবে এখনও তাঁর পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। তবে কেন তাঁরা টাকা পাননি, তা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। ডায়মন্ডহারবার ১ নম্বর ব্লকের বিডিও মিলনতীর্থ সামন্ত বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় মিঠুবাবুর নাম রয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তাঁর নাম বিডিও অফিস থেকে অনুমোদন করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানোও হয়েছে। ব্যাংকে লেনদেন সংক্রান্ত কিছু সমস্যা থাকায় ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে তাঁর হয়তো কিছুটা দেরি হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়িই ওই টাকা তিনি পেয়ে যাবেন।’’
পঞ্চায়েত আর প্রশাসনিক কর্তাদের এই আশ্বাসবাণী, দায় ঠেলাঠেলির মাঝে মিঠুবাবুর ভরসা বলতে এখন ত্রিপল ঢাকা একচিলতে ঘর, রেশনের চাল আর প্রতিবেশীদের কাছে চেয়েচিন্তে জোগাড় করে আনা কিছু সাহায্য। একসময় ভাড়া করা টোটো নিয়ে ডায়মন্ডহারবারের রাস্তায় সারাদিন ধরে খাটতেন রত্নেশ্বরপুরের বাসিন্দা বছর আটচল্লিশের মিঠু রক্ষিত। স্ত্রী সুনন্দাদেবী সামলাতেন ঘর-গেরস্থালি। সামান্য রোজগারে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন আগেই। অভাবের সংসার হলেও স্বামী-স্ত্রীর স্বপ্ন ছিল একটা পাকা ঘর ছিল। টোটো চালিয়ে যা আয় হত, আধপেটা খেয়েও তার থেকে কিছু অর্থ মিঠুবাবু জমিয়েছিলেন পাকা ঘর বানাতে। গেঁথেও ফেলেছিলেন কয়েকটা ইটের পিলার। কিন্তু বিধি বাম। লকডাউনে বন্ধ হল রোজগার। আর কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর শরীরে বাসা বাঁধল মারণ ক্যানসার।
আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ মিঠুবাবু জানান, ‘‘দু’চোখে স্বপ্ন ছিল অনেক। টোটো চালিয়ে জীবনধারণ করলেও স্বামী-স্ত্রী নতুন ঘরে নতুন করে বাঁচব ভেবেছিলাম। কিন্তু লকডাউনে কাজ হারালাম। বাড়িতেই বসেছিলাম। হঠাৎ একদিন শুরু হল গলায় যন্ত্রণা। প্রথমে পাত্তা না দিলেও দিনদিন যন্ত্রণাটা বাড়তেই থাকল। চিকিৎসায় ধরা পড়ল ক্যানসার। ভেঙে খানখান হয়ে গেল সব স্বপ্ন।’’ সুনন্দাদেবী বলেন, ‘‘দু’বেলা দু’মুঠো ভাল করে খেতে পাওয়া তো দূরের কথা, ওঁর চিকিৎসার খরচটুকুও এখন আর জোগাড় করে উঠতে পারছি না। পাকা ঘরে বাস করার স্বপ্ন আর দেখি না।’’ তবে বিডিও আশ্বাস দিয়েছেন, ওই পরিবার ঝড়ে দু্র্গতদের তালিকায় রয়েছে। তাই তাঁরা অবশ্যই সহায়তা পাবেন। সেই আশ্বাসের বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে মিঠু এবং সুনন্দা রক্ষিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.