সুমিত বিশ্বাস: হাই কোর্টে ধাক্কা খেল পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের টুরগা প্রকল্প। গ্রামসভার অনুমতি না নিয়ে কাজ শুরু করায় রাজ্য সরকারের নথি খারিজ করল আদালত। ফলে পরিবেশমন্ত্রকের তরফে টুরগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রথম ধাপে যে ছাড়পত্র মিলেছিল তাও খারিজ করেছে আদালত। ফলে পুনরায় কাজ শুরু করতে হলে নতুন করে গ্রামসভার বৈঠক করে সদস্যদের সম্মতি নিয়ে তা পরিবেশমন্ত্রকের দ্বারস্থ হতে হবে রাজ্যকে।
২০১৬ সাল থেকে ২৯২ হেক্টর জমির উপর শুরু হয়েছিল টুরগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। মোট জমির মধ্যে ২৩৪ হেক্টর ছিল বনভূমি, সরকারি খাস ৩৪ হেক্টর এবং রায়তি জমি ২৪ হেক্টর। সরকারি আইন অনুযায়ী গ্রামসভায় উপস্থিত ৫০ শতাংশ মানুষের সম্মতি মিললে তবেই প্রকল্পের কাজ এগোনো যায়। অভিযোগ, বছরখানেক আগে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন নিজেদের মতো করে এলাকার বাসিন্দাদের দিয়ে সই করিয়ে নেয়। তাতেই অশান্তির সূত্রপাত। কারণ, জমি হারানোর পাশাপাশি রয়েছে জীবিকা হারানোর ভয়। ওই এলাকার বাসিন্দারা মূলত জঙ্গল নির্ভর। আর অযোধ্যা পাহাড়ে টুরগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হলে কাটতে হবে প্রচুর গাছ। যা ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিপদ সংকেত। গাছ কাটা হলে বিপদের মুখে পড়বে বন্যপ্রাণও। সেই কারণেই প্রকল্পের বিরোধিতা করে সরব হন স্থানীয় বাসিন্দা ও ভারত জাকাত মাঝি পারগনার সদস্যরা। তাঁরা স্লোগান তোলেন, ‘অযোধ্যা থেকে চোখ সরান, নাহলে দ্বিতীয় হুল হবে’ এই স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আদিবাসী মানুষজন বলছেন,’ তীর-ধনুকে মারও টান, আবার হবে উল গুলান।’
এরপরই নিয়ম বহির্ভূতভাবে সই করানোর বিষয়টি জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। মঙ্গলবার বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। গ্রামসভার অনুমতি না নিয়ে কাজ শুরু করায় রাজ্যসরকারের নথি খারিজ করেন বিচারপতি। অর্থাৎ আপাতত বন্ধ প্রকল্পের কাজ। জানা গিয়েছে, পুনরায় গ্রামসভার অনুমতি নিয়ে নথিভুক্ত নিয়ম মেনে ফের প্রকল্পের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে হবে রাজ্যকে। তবেই ফের শুরু হতে পারে প্রকল্পের কাজ। প্রসঙ্গত, এই পাহাড়েই পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্টের জন্য প্রচুর গাছ কাটা হয়েছিল। ফের টুরগা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য গাছ কাটায় ক্ষোভ জমেছে স্থানীয়দের মধ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.