স্টাফ রিপোর্টার: ৩১ বছরের অপেক্ষার অবসান। ইতিহাস তৈরি হল রাজ্যে। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা হয়ে গেল জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। কাজ শুরু হবে সোমবার থেকে। এবার আর মামলার জন্য হাজারো ঝক্কি মাথায় করে কলকাতায় ছুটতে হবে না উত্তরবঙ্গের মানুষকে। এদিন দুপুর একটা নাগাদ জলপাইগুড়িতে নব নির্মিত সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করেন কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। হাই কোর্ট আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি সুব্রত তালুকদার, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, বিচারপতি দেবাংশু বসাক-সহ অন্যান্য সিনিয়র বিচারপতিরা। ছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ও রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। মূলত কলকাতা হাই কোর্ট ও রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতায় দ্রুত চালু হয়ে গেল সার্কিট বেঞ্চ।
সোমবার সার্কিট বেঞ্চে ডিভিশন বেঞ্চের দায়িত্ব নেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। দ্রুত সার্কিট বেঞ্চের কাজ কার্যকর করার পিছনে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “রাজ্যের ইতিহাসে এটা একটা ঐতিহাসিক দিন। এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হল। এখানে মানুষ অনেক ভাষায় কথা বলেন। সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু হলে তাঁদের আর সমস্যায় পড়তে হবে না। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জলপাইগুড়ি শান্তির মাটি। উত্তরবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সার্থক হল।” তিনি বলেন, “১৯৮৮ সালে সার্কিট বেঞ্চের চিন্তাভাবনা হয়েছিল। আর তা সার্থকতা পেল দীর্ঘ ৩১ বছর পর। এটা আরও আগে করা যেত। কিন্তু সে বিষয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই।” কলকাতা হাই কোর্টের পূর্বতন প্রধান বিচারপতিদের ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “সার্কিট বেঞ্চের কাজ দ্রুত রূপায়ণে জে্যাতির্ময় ভট্টাচার্য, দেবাশিস করগুপ্ত ও অন্যান্য বিচারপতিরা অনেক চেষ্টা করেছেন। যার ফলশ্রুতি আজ এই সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন করলেন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার।” স্থানীয় আইনজীবীদের তরফে বিচারপতিদের একটি আবেদনও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাই কোর্টে মামলার বয়ান সাধারণত ইংরেজিতে উপস্থাপন করেন আইনজীবীরা। কিন্তু জলপাইগুড়ির আইনজীবীরা যেহেতু ইংরেজিতে অভ্যস্ত নন, তাই আপাতত তাঁদের বাংলায় বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আগামিদিনে রাজ্যের আদালতগুলির সংস্কার করা হবে বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিক পর্বে সার্কিট বেঞ্চে থাকবে একটি ডিভিশন বেঞ্চ ও দু’টি সিঙ্গল বেঞ্চ। প্রাথমিক পর্বে যে ডিভিশন বেঞ্চ ও দু’টি সিঙ্গল বেঞ্চ গঠিত হবে তার দায়িত্বে থাকবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার, বিচারপতি মমতাজ খান, বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি মধুমতি মিত্র। ১১ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত এই বেঞ্চের এই তিনটি বেঞ্চের (একটি ডিভিশন বেঞ্চ ও দু’টি সিঙ্গল বেঞ্চ) দায়িত্বে থাকবেন এই তিন বিচারপতি। পরবর্তীতে কোন বিচারপতিরা সার্কিট বেঞ্চের দায়িত্বে থাকবেন তা নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হবে বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট প্রশাসন। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের আওতাভুক্ত নির্ধারিত এলাকার মামলার শুনানি হবে। বর্তমানে সার্কিট বেঞ্চের আওতাভুক্ত এলাকার যে মামলাগুলির শুনানি কলকাতা হাই কোর্টে চলছে সেগুলি পর্যায়ক্রমে সার্কিট বেঞ্চে চলে যাবে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য একপ্রস্থ তরজা হয়। রাজ্যে এসে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন সেরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অভিযোগ, কলকাতা হাই কোর্টের আওতাভুক্ত জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন হলেও খোদ হাই কোর্ট প্রশাসনকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি কেন্দ্র। এরপরই ফের সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন করা হবে বলে স্থির হয়। সেই মতো এদিন উদ্বোধন হয়ে গেল সার্কিট বেঞ্চ।
মূলত জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কোচবিহার ও কালিম্পং জেলার মামলাগুলির শুনানি এই সার্কিট বেঞ্চে হবে। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন “জলপাইগুড়ি হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন” নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সার্কিট বেঞ্চের বারে বসবেন বলে জানান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিজিৎ সরকার। সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শহরবাসী যাতে দেখতে পারেন সেজন্য জলপাইগুড়ি শহরের ২৫টি জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শহরের মোড়গুলি আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আলোয় সেজে উঠেছে সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবনও।
[জোট নিয়ে জটিলতার মধ্যেই মালদহে পিছোল রাহুল গান্ধীর সভা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.