সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বহু বিতর্ক, প্রতিকূলতা পেরিয়ে শেষপর্যন্ত আজ দুপুরেই লোকসভায় পেশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (CAB)। বিলটি পেশের পক্ষে ২৯৩ টি ভোট এবং বিপক্ষে মাত্র ৮২ টি ভোট পড়েছে। ফলে সংখ্যার নিরিখে সহজেই পেশ হয়ে গিয়েছে বিল। সংসদে যখন এই বিল পেশ হচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই খড়গপুরের সরকারি সভা থেকে এরই প্রতিবাদে ফের সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘সিএবি এবং এনআরসি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।’ জনগণকে আবারও অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আশ্বস্ত করলেন, কাউকে দেশছাড়া হতে হবে না।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান-সহ একাধিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে ভারতে শরণার্থী হয়ে আসা অ-মুসলিম বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব প্রদানে তৎপর দ্বিতীয় মোদি সরকার। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। কারণ, তাঁদের সামনে জ্বলন্ত নিদর্শন, অসমের নাগরিকপঞ্জি। সেখানে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান প্রক্রিয়ায় ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন, যাদের মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু। দীর্ঘ রাজনৈতিক বিতর্ক শেষে সোমবারই বিলটি পেশ হয়েছে লোকসভায়। পেশ হওয়ার বিরোধিতাতেই উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও বারবার অসমে এনআরসি প্রসঙ্গ তুলেই বারবার কেন্দ্রকে আক্রমণ করে এসেছেন। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। অসমে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালির নাম বাদ পড়েছে, এই উদাহরণ সামনে রেখে খড়গপুরের সভাতেও মমতার হুঁশিয়ারা, ‘এনআরসি বাংলায় হতে দেব না। ভাগাভাগি করতে দেব না। কাউকে তাড়ানো যাবে না। এনআরসি, ক্যাব নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন, আমরা যতদিন আছি, এসব হবে না।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকজন ফেট্টিবাজের কথায় ভয় পেয়ে এখানে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এটা কতটা দুঃখের! তাই সবাইকে বলছি, ভয় পাবেন না। আমরা আপনাদের মাথার উপর আছি।’ এর বিরোধিতায় সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, নাগরিকপঞ্জির নবায়ন – এই বিষয়গুলি সবিস্তারে যাঁরা জানেন, তাঁদের কাছে এই ধারণাো পরিষ্কার যে সিএবি বা ক্যাব পাশের মূল লক্ষ্য, ভবিষ্যতে নাগরিকপঞ্জির পুনর্নবীকরণ, যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান এবং তা না হলে ‘অনাগরিক’ তকমা দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্প বা বন্দি শিবিরের ঠাঁই দেওয়া। তবে এসবই ভবিষ্যতের ঘটনা। আপাতত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এনে সমস্ত হিন্দু নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই লক্ষ্য, এটাই বারবার দাবি করেছে দ্বিতীয় মোদি সরকার। সেদিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিএবি-এনআরসিকে প্রায় এক সারিতে বসিয়ে দেওয়ার মন্তব্য হয়ত আক্ষরিক অর্থে কিছুটা বিভ্রান্তির, কিন্তু তার ভবিষ্যৎ তাৎপর্য একেবারেই নিখুঁত বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.