নন্দন দত্ত, সিউড়ি: টাকা দিয়ে সরকারি কাজের বরাত পাওয়া যায়, অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) নিয়ে সিউড়ির (Suri) বালি ব্যবসায়ী অরূপরতন ভট্টাচার্যর এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাল জেলা প্রশাসন। তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নকল চালানের মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে বালি পাচারের অভিযোগে লোকনাথ অটোমোবাইলসের তিলপাড়া ব্যারেজ সংস্কারের বরাত বাতিল হয়। ভূমি দপ্তরের তরফে ‘লোকনাথ অটোমোবাইলস’-এর চালান সমেত বালি ভরতি লরি আটক করে। মহম্মদবাজার থানায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় বালি বোঝাই লরি।
‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ ২০১৮ সালে বালি পাচারের সেই খবর প্রকাশিত হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু তিলপাড়া ব্যারেজ সংস্কারের বরাত বাতিল করেন। যদিও লোকনাথ অটোমোবাইলসের অংশীদার অরূপরতন ভট্টাচার্য দাবি করেন, মহম্মদবাজার থানার পক্ষ থেকে তদন্ত করে সেই অভিযোগে তাদের ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলাশাসক তাদের বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। বরং কেন বরাত দিয়ে তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে গত সপ্তাহে তিনি কলকাতা হাই কোর্টে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন বলে জানান অরূপবাবু।
সিউড়ির কাছেই তিলপাড়া জলাধারের নাব্যতা কমে যাওয়ায় তার সংস্কারের পরিকল্পনা করে সেচ দপ্তর। রাজ্যের নির্দেশে তৎকালীন জেলাশাসক পি মোহন গান্ধী সর্বোচ্চ টাকা দেওয়া কোম্পানি হিসাবে ৮৬ লক্ষ টাকায় তিলপাড়া সংস্কারের জন্য সাময়িক বরাত দেয়। যাতে বলা ছিল, সিউড়ি খটঙ্গা এলাকা থেকে সাত কোটি ২৩ লক্ষ কিউবিক মিটার বালি (Sand) নিজেদের খরচে তুলে দিতে হবে। কিন্তু বালি তুলে তা বিক্রির জন্য ভূমি দপ্তরের কাছে অনুমতি নিয়ে রাজস্ব জমা করে সেই চালানের মাধ্যমে বালি বিক্রি করতে হবে।
যদিও বরাত পাওয়া সংস্থার অন্য অংশীদার প্রবীর মণ্ডল দাবি করেন, ”ওই বালি থেকে দু’শো কোটি টাকা লাভ হবে – তা দেখিয়েই ‘বিতর্কিত’ ওই বালি তোলার বরাত আমাদের দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। সেই সূত্রে তাঁকে ৪৬ লক্ষ টাকার গাড়ি উপহার দেওয়া। সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের চাওয়া দশ কোটির মধ্যে ৫ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল।” প্রবীরবাবুর অভিযোগটি সিবিআই খতিয়ে দেখছে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের দাবি, অরূপবাবুরা বালির বরাত দেখিয়ে এবং তাদের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি গাড়ির (Cars) শোরুম দেখিয়ে নামে বেনামে কুড়ি কোটি টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করেন। যার মধ্যে এখনও সিউড়ির একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে চার লক্ষ, চুক্তিতে থাকা তাদের গাড়ি সংস্থায় তিন লক্ষ টাকা, একটি অন্য সংস্থায় আরও লক্ষ খানেক টাকা বাকি আছে। তাদের এই ঋণের বহর দেখে ব্যাংকের তরফে আগেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে তারা চলে আসেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.