ধীমান রায়, কাটোয়া: দেড়মাস পার হয়ে গেল লকডাউন চলছে দেশজুড়ে। কাজ বন্ধ, বন্ধ রোজগারও। দু’বেলা খাবার জোগানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের কাছে। আর তাঁদেরই মুশকিল আসানে এগিয়ে এসেছিল বর্ধমান শহরের দুটি ক্লাব। টানা এতগুলো দিন ধরে বিপর্যস্ত মানুষদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন ক্লাবের সদস্যরা। তবে সবটাই নিঃশব্দে, প্রচারের আলো থেকে শত যোজন দূরে থেকে।
মানুষের দুর্দিনে এমন সাধু উদ্যোগের পুরোভাগে রয়েছেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ মণ্ডল। দেড়মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। তা নিয়ে আক্ষেপ থাকলে, আপাতত সরিয়ে রেখেছেন বিশ্বজিৎবাবু। তাঁর এখন ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছে এই আকালে মানুষের পাশে থাকা। ভোরে আলো ফুটতেই বিশ্বজিৎবাবু ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে নেমে পড়ছেন এই মহৎ কর্মযজ্ঞে।
বর্ধমান শহরের উপকন্ঠে জাতীয় সড়কের ধারেই রয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধীন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টার ‘অনাময়’। নিউরোলজি ও কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসা হয় এখানে। এই হাসপাতালে শতাধিক রোগী প্রায় সবসময়ই ভরতি থাকেন। থাকতে হয় রোগীদের পরিবারের লোকজনদেরও। ‘অনাময়’ হাসপাতাল এমনিতেই বর্ধমান শহর থেকে অনেক দুরে। তারউপর লকডাউনের কারনে খাবারের দোকান পর্যন্ত কাছাকাছি খোলা পাওয়া যাচ্ছে না। আর ওই রোগীদের পরিবারের লোকজনদের এখনও নিয়ম করে দু’বেলা খাবার জুগিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বজিৎবাবুরা।
বর্ধমানের সর্বমিলন সংঘ ও ইয়ংস্টার ক্লাব নামে এই দুই ক্লাবের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। খাবারের মেনুতে কোনও দিন মাছভাত, তো কোনওদিন থাকে ডিমভাত। মাঝেমধ্যে মাংসও খাওয়ানো হচ্ছে। এখনও এই শিবির চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে ‘অনাময়’ হাসপাতালে। যে কারণে হাসপাতালে রোগীর পরিজনদের এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যাতেই পড়তে হয়নি। শুধু হাসপাতালের দেড় শতাধিক মানুষের জন্যই নয়, বিশ্বজিৎবাবুরা বর্ধমান ২ ব্লকের আমড়া, শক্তিগড়, প্যামড়া, স্বস্তিপল্লি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের গরিব পরিবারগুলিকে বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত ১৬ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ক্লাব সূত্রে।
এছাড়া শক্তিগড় থেকে শুরু করে বর্ধমান শহরের তেলিপুকুর, কার্জন গেট এলাকা পর্যন্ত দুপুর, রাতে সর্বমিলন সংঘ ও ইয়ংস্টার ক্লাবের সদস্যরা গাড়ি, বাইক নিয়ে ঘুরছেন। সঙ্গে খাবারের প্যাকেট। রাস্তায় কোনও ভবঘুরেকে অভুক্ত অবস্থায় দেখলেই তাঁকে খাইয়ে দিচ্ছেন। দেড়মাস ধরে নীরবে এই ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র ব্রত চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বজিৎবাবু অ্যান্ড কোং। তবে প্রচারের আলোয় আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তাঁদের। বরং আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে চান তাঁরা। দুঃসময়ে এ ধরনের শুভ উদ্যোগই বোধহয় আমাদের সম্বল আজও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.