চন্দ্রজিৎ মজুমদার,কান্দি: এলাকার উন্নয়নের কাজ করতে গেলে কোথায় কোথায় দিতে হয় কাটমানি? কত টাকা যায় ব্লক অফিস-থানায়? কালীপুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সেই কাটমানির হিসেব দিলেন খোদ ওসি। নেটদুনিয়ায় ভাইরাল সেই ভিডিও। মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানার ওসি সন্দীপ সেনের এই ভিডিও ঘিরে শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রকাশ্যে এধরনের মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সাহোরা গ্রাম পঞ্চায়েত। তালবোনা শ্মশানকালী পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সোমবার রাতে উপস্থিত ছিলেন বড়ঞা ওসি সন্দীপ সেন। গ্রামবাসীরা তাঁর হাতে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দিয়ে সকলের সামনে কালীপুজো নিয়ে দু-এক কথা বলার অনুরোধ করেন। হাতে মাইক্রোফোন পেয়েই কেন গ্রামের উন্নয়ন হচ্ছে না তার খতিয়ান দিতে শুরু করেন সন্দীপ সেন। তাঁর সেই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছ।
ওসির কথায়, “১০০ টাকার মধ্যে প্রথমেই ৪০ টাকা লেস করে (বাদ দিয়ে) কাজ ধরতে হয় ঠিকাকর্মীকে। তারপর তাকে লাভ করতে হয় ২০ টাকা। তাহলে দাঁড়াল ৬০ টাকা। ব্লক অফিসকে দিতে হয় ৪ টাকা। তাহলে দাঁড়াল ৬৪ টাকা। ৫ টাকা দিতে হত আগের ওসিদের অর্থাৎ পুলিশকে। এছাড়াও ৫ টাকা দিতে হয় শেয়ালের বাচ্চাদের। সবশুদ্ধ ঠিকা কর্মী দিতেই চলে যায় ১০০ টাকায় ৭৫ টাকা। ২৫ টাকায় কী কাজ হবে, আপনারাই বুঝুন।” গ্রামবাসীদের সামনে ওসি আরও বলেন, “আমি সব বন্ধ করে দিয়েছি। জীবনকে (জীবনকৃষ্ণ সাহা বিধায়ক) বলে দিয়েছি একটা কমিটি তৈরি করে দিতে।”
এরপর ঠিকাকর্মীদের তাঁর কড়া বার্তা, “গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ সেই এলাকার ঠিকাকর্মীরাই করবেন। অন্য জায়গায় খাবার জন্য হাত বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না।” কালীপুজোর অনুষ্ঠানের ৩৫ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়। এই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে বড়ঞা থানার ওসি সন্দীপ সেনের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ফোন-হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার জানিয়েছেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে জেলা তৃণমূলের কো অর্ডিনেটর তথা কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার জানিয়েছেন, “ওসি সন্দীপ সেনের ভাইরাল ভিডিওটি আমি পুরোটাই দেখেছি। উনি যে কথা সেদিন সকলের সামনে কালীপুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বলেছেন পুরোটাই অন্যায়। উনি যা বলেছেন তার জন্য উনিই দায়ী। তৃণমূল দলে এই ধরনের কোনও কাজ হয় না। আসলে বড়ঞা থানার ওসি সন্দীপ সেন নিজেকে উন্নয়নের রূপকার মনে করেন। নিজের কতটা ক্ষমতা তা বুঝতেই চান না উনি। যা বলেছেন খুবই অন্যায় এবং তৃণমূল দলের এতে ক্ষতি হবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।” যদিও কান্দির বিধায়কের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.