চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: তিনমাস ধরে স্কুল বন্ধ। অনলাইন ক্লাস করার সামর্থ্য নেই সেই বঞ্চিত পড়ুয়াদের গ্রামে গিয়ে খোলা আকাশের নীচে পড়ালেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বৃহস্পতিবার অভিনব এই কর্মকাণ্ড হয়ে গেল বার্নপুরের বটথল গ্রামে। অভিনব এই পাঠদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন আসানসোলে অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) প্রশান্ত মণ্ডল।
করোনার আবহে লকডাউন। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় প্রাইভেট স্কুলগুলির পড়ুয়ারা মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস করতে পারলেও তিনমাস ধরে পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত রয়েছে সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা। বিশেষ করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকার পড়ুয়ারা একেবারেই বঞ্চিত ডিজিটাল পঠনপাঠন থেকে। সেইসব পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) স্কুলের শিক্ষকদের গ্রামে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর সেই নির্দেশকে প্রথম কার্যকরী করে দেখালেন বার্নপুর শান্তিনগর বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পাঠ্যবইয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি জেলা হাসপাতালের ডাক্তার সঞ্জিৎ চট্টোপাধ্যায় ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলার পাঠ দিলেন। বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদরা পাঠ দিলেন শরীরচর্চার। সব থেকে শেষে ছিল স্কুলের মিড ডে মিলের মতো মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন। যার দায়িত্ব নেয় বার্নপুর নববিকাশ ক্লাব।
বৃহস্পতিবার গ্রামে শুরু হয় গাছের নিচে পড়ুয়াদের জন্য স্কুল। বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে বাংলা, বিজ্ঞান, অঙ্ক, শরীরচর্চার ক্লাস হয় এদিন। এমনকি পর্দায় অ্যানিমেশনের মাধ্যমেও ক্লাস নেওয়া হয়। হাতের সামনে অভিনব স্কুল পেয়ে পড়ুয়া ও অভিভাবকরাও খুশি হন। এদিন ২৯৫ জন পড়ুয়া পঠনপাঠন করেন। অর্পিতা মণ্ডল নামে এক ছাত্রী বলেন, “তিনমাস পর আবার স্কুল করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। সব বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা হল একসঙ্গে।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে পাঠদান পর্ব শুরু করলাম আমরা। যেখানে স্মার্টফোন নেই, প্রযুক্তির ব্যবহার নেই সেখানে গিয়ে এরকম ধরনের পাঠদান পর্ব চলবে।”
অতিরিক্তি জেলাশাসক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, “অভিনব এই উদ্যোগ দেখে আমার শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলার কথা মনে পড়ে গেল। আমরা চাইব, শান্তিনগর বিদ্যামন্দিরের মতো আসানসোলের অন্য স্কুলগুলিও এরকমভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকায় পাঠদানে এগিয়ে আসুক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.