সুমন করাতি, হুগলি: ভদ্রেশ্বরে সুপ্রাচীন জগদ্ধাত্রী মা খ্যাত বুড়িমা নামে। ২৩২ বছরের ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলা বারোয়ারির পুজো দেখতে প্রতিবছরই লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমে। বুড়িমাকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে তোলেন পুজো উদ্যোক্তারা, সেই দৃশ্য দেখার জন্য ভিড় জমে যায় মন্দির প্রাঙ্গণে। এবছর ২২৫টি বেনারসিতে সাজিয়ে তোলা হবে মাকে।
ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে জানা যাবে, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুর গৌরহাটিতে বাস করতেন। তিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুমতি নিয়ে দুই বিধবা কন্যাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো করেন। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত পুজো রূপ পায় বারোয়ারির। তৈরি হয় তেঁতুলতলা বারোয়ারি। এখানে দেবী পূজিত হন তন্ত্রমতে। প্রতি বছর পুজো শুরুর আগে প্রতিমা তৈরি হয়ে গেলে কাপড় পরানো হয়। কয়েক হাজার শাড়ি দান হিসাবে পড়ে মাকে সাজানোর জন্য। এই বছরও ঘটেনি তার ব্যতিক্রম। প্রায় ২২৫টি বেনারসি শাড়িতে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বুড়িমাকে।
পুজোর এক উদ্যোক্তা বলেন, প্রতি বছরই চতুর্থী পঞ্চমীর দিনে মাকে কাপড় পরানো হয়। বহু ভক্ত শাড়ি দান করেন, সেই শাড়ি পরানো হয় মাকে। মূলত বেনারসি শাড়িতে সাজিয়ে তোলা হয় সকলের প্রিয় বুড়িমাকে। এবছর প্রায় ২২৫টি বেনারসি শাড়ি পরানো হবে গোটা প্রতিমা জুড়ে। প্রত্যেক বছর প্রায় বেনারসি, ছাপা ও অন্যান্য শাড়ি মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি শাড়ি থাকে মায়ের জন্য।
সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, তেঁতুলতলা বুড়িমায়ের যে শাড়ি, সেই শাড়ি পরলেই নাকি অবিবাহিতদের বিয়ে হয়ে যায়। প্রতিবছর মায়ের পরনের শাড়ি বিশেষ সময় দান করে দেওয়া হয়। সকলে বুড়িমায়ের শাড়ি নেওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকেন। মায়ের পরনে যে বেনারসি থাকে সেগুলো মূলত কোনও গরিব মেয়ের বিয়েতে দিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সারারাত জুড়ে মায়ের পরনে পরানো হয়েছে বেনারসি শাড়ি। প্রায় ২২৫টি বেনারসি শাড়ি ও শতাধিক তাঁত ও ছাপা শাড়িতে সেজে উঠছেন বুড়িমা। পুজোর সঙ্গে শাড়ির একটা ওতপ্রোত যোগ রয়েছে। কারণ দশমীর দিনে দেবীকে বরণ করতে যাঁরা আসেন, তাঁরা মহিলা নন, বরং তাঁরা পুরুষ। সকলেই একেবারে মহিলাদের মতো শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে তবেই বরণ করতে আসেন তেঁতুলতলার বুড়িমাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.