সেই কদম ফুল। -জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: অকাল কদম ফুলে ধনেশ্বরের পুজো। এই রীতি চলে আসছে পাঁচ শতাব্দী ধরে। আউশগ্রামের ধনকুড়া গ্রামের ধনেশ্বর শিবের পুজোয় রেওয়াজ রয়েছে গাজন সন্ন্যাসীদের মধ্যে। একজন মন্দিরে বসেই জানিয়ে দেন, গ্রামের কোনদিকে গিয়ে কোথায় পাওয়া যাবে পুজোর এই প্রধান ফুলটি। এরপর মধ্যরাতে গাজন সন্ন্যাসীর নির্দেশ মতো জায়গায় গিয়ে দেখা যায় সেই কদমগাছের মধ্যে একটিই ফুল রয়েছে। কে গাছে উঠে ফুলটি পেড়ে আনবেন, তা ওই গাজন সন্ন্যাসী-ই জানিয়ে দেন। ফুলটি পাড়া হলে জনৈক গাজন সন্ন্যাসী হাতে ধরে পুরোহিতের সঙ্গে মন্দিরে ফিরে আসেন। তারপর হয় শিবের মূল পুজো।
জানা গিয়েছে, রবিবার রাত প্রায় একটা নাগাদ ধনকুড়া গ্রামের পুরানো দেয়াসীপাড়ার কাছে একটি গাছ থেকে ওই কদমফুলটি পাড়া হয়। গোপীনাথ পাল নামে এক গাজন সন্ন্যাসী নির্দেশ দেওয়ার পর সদানন্দ দাস বৈরাগ্য গাছে উঠে কদমফুলটি গাছ থেকে পাড়েন। ধনকুড়া গ্রামে রয়েছে বহুকাল আগে প্রতিষ্ঠিত একটি শিবলিঙ্গ। যা ধনেশ্বর নামে পরিচিত। পুরনো আমলের মন্দিরের গর্ভগৃহের প্রায় ৫ ফুট গভীর গর্তের মধ্যে রয়েছে কষ্টিপাথরের তৈরি এই শিবলিঙ্গটি। জনশ্রুতি রয়েছে, ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে এই মন্দিরে বর্গিহানা হয়েছিল। বর্গি দস্যুরা শিবমন্দির ভাঙতেও শুরু করেন। তারপর বর্গি সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত ধনেশ্বর শিবের দর্শন করা মাত্রই তাঁর মন পরিবর্তন হয়ে যায়। সৈন্যদের তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দেন মন্দিরে কেউ যেন আর স্পর্শ না করে। দলবল নিয়ে ফিরে যান ভাস্কর পণ্ডিত। পরবর্তীকালে মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়েছিল।
প্রতিবছরই ধনকুড়া গ্রামে গাজন ঘিরে উন্মাদনা থাকে। সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান চলে। মেলার দোকানপাট বসে। গ্রামবাসী রাজদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের গ্রামের ধনেশ্বর শিব ৫০০ বছরের বেশি প্রাচীন। পুজোয় নিয়ম রয়েছে মধ্যরাতে কদমফুল গাছ থেকে পেড়ে এনে ওই ফুল দিয়ে মূল পুজো হবে। সাধারণত যিনি মূল গাজন সন্ন্যাসী তিনিই জানিয়ে দেন, কোথা থেকে পাওয়া যাবে অসময়ের কদমফুল। দেখা যায় ওই কদমগাছটির কোনও একটি ডালের মধ্যে তাজা একটি ফুল ধরে রয়েছে। সেটিই দেবতার পুজোয় লাগে। এই রীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন।”
ধনেশ্বর শিবের গাজন ঘিরে কার্যত সাতদিন ধরে উৎসব চলে। রবিবার মধ্যরাতে কদমফুল আনার পর পুজো শেষ হতে সোমবার ভোর গড়িয়ে যায়। গাজন সন্ন্যাসীদের বিভিন্ন উপাচারের পাশাপাশি রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতশবাজির প্রদর্শনী। বনবিভাগের পানাগড় রেঞ্জের আধিকারিক প্রণব কুমার দাস বলেন, “এই সময় কদমগাছে সবে ফুল ধরতে শুরু করে। ফুলের বীজ পাওয়া যায় জুন, জুলাই নাগাদ। জুলাই নাগাদ আমরা নার্সারির জন্য বীজ সংগ্রহ করি। সব গাছে ফুল না এলেও কিছু কিছু গাছে ইতিমধ্যে ফুল চলেও এসেছে। তাই এখন কদমফুল একেবারে দুষ্প্রাপ্য নয়। এই ফুল পাওয়া যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.