সৌরভ মাজি, বর্ধমান: সন্তানরা দেখে না। বৃদ্ধ বয়সে, অশক্ত শরীরে ভিক্ষা করে খেতে হয়। ভিক্ষে করেই সামান্য টাকা জমিয়েছিলেন। আর ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সোনার দুল ও হার। কিন্তু, সেটুকু সম্বলও যে আর রইল না! ভেঙে পড়েছিলেন সহায়-সম্বলহীন এক বৃদ্ধা। হারিয়ে যাওয়া পুঁটলি যে ফিরে পাবেন, কল্পনাই করতে পারেননি তিনি। কিন্তু, বাস্তবে সেটাই ঘটল।
[নেশার টাকা দেয়নি, বৃদ্ধ দম্পতিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বেধড়ক মারধর ছেলের]
বর্ধমান শহর সংলগ্ন কামনাড়া গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যা প্রামাণিক। বৃদ্ধা মাকে দেখতে রাজি নয় সন্তানরা। তাই শেষ বয়সে পেটের তাগিদে পথে নামতে হয়েছে সন্ধ্যাদেবীকে। ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন গুজরান করেন তিনি। দিনভর চেয়েচিন্তে যা পান, তা থেকে বহুকষ্টে হাজার তিনেক টাকা জমিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। আর বাড়ি ছেড়ে আসার সময়ে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটি সোনার হার ও দুল। সোনা ও টাকার ব্যাগটি কখনই কাছছাড়া করতেন না তিনি। সবসময়ই সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। সেটাই কাল হল। বর্ধমান স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে ব্যাগটি ফেলে চলে এসেছিলেন সন্ধ্যা প্রামাণিক। ঘটনাচক্রে প্ল্যাটফর্মে ওই বৃদ্ধার পাশেই বসেছিলেন ভাতারের বাসিন্দা গৌর কেশ ও আউশগ্রামের শেখ আসরাফ। তাঁদের জন্য হারানো ব্যাগ ফিরে পেলেন ওই বৃদ্ধা।
গৌর কেশ ও শেখ আসরাফ কিন্তু বিত্তশালী নন। বরং একেবারেই খেটে খাওয়া মানুষ। ওই দুই যুবক জানিয়েছেন, সোমবার ট্রেন ধরার জন্য বর্ধমান স্টেশনে গিয়েছিলেন তাঁরা। ২ নং প্ল্যাটফর্মে পুঁটলি নিয়ে বসেছিলেন সন্ধ্যাদেবী। কিছুক্ষণ পর তাঁরা দেখেন, ওই বৃদ্ধা চলে গিয়েছেন। কিন্তু, তার ব্যাগটি পড়ে রয়েছে। খোঁজাখুঁজি করেও ব্যাগের মালিকের সন্ধান পাননি গৌর কেশ ও শেখ আসরাফ। শেষপর্যন্ত, বাধ্য হয়ে ব্যাগটি খোলেন তাঁরা। দেখেন, ব্যাগে কয়েক হাজার টাকা ও সোনার গয়না রয়েছে। দুটি ফোন নম্বরও পাওয়া যায়। ওই দুই যুবকের দাবি, সেই নম্বরে ফোন করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু, তাই বলে হাল ছাড়েননি গৌর ও আসরাফ। শেষপর্যন্ত শনিবার রাতে যোগাযোগ হয় সন্ধ্যা প্রামাণিকের সঙ্গে। রবিবার সকালে বর্ধমান স্টেশনে সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধাকে পুঁটলিটি ফিরিয়ে দিলেন গৌর কেশ ও শেখ আসরাফ। আপ্লুত সন্ধ্যা প্রামাণিক বলেন, ‘ভাবতেই পারিনি, কোনওদিন পুঁটলি ফিরে পাব। মাংস খাওয়ার জন্য টাকা দিতে চাইলাম, সেটাও নিল না।’ বৃদ্ধাকে ব্যাগ ফিরিয়ে দিতে পেরে বেজায় খুশি গৌর কেশ ও শেখ আসরাফও। তাঁদের সাফ কথা, সৎ পথে থেকে সামান্য রোজগার করলেও সুখেই আছেন।অন্যের জিনিস নিয়ে পাপ করতে চান না।
ছবি: মুকলেশুর রহমান
[কালীঘাট মন্দিরের সামনে ১০ টাকার বখরা নিয়ে রক্তারক্তি কাণ্ড, গুরুতর জখম বৃদ্ধা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.