সৌরভ মাজি, বর্ধমান: জেলাজুড়ে রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদার জুলুম চলছিলই। শুক্রবার তা চরম আকার নিল। বর্ধমানের তেলিপুকুর এলাকায় দাবি মতো কালীপুজোর চাঁদা না দেওয়ায় এক লরিচালককে বেদম মারধর করে আদায়কারীরা। এমনকি লরির কাচও ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে পথ অবরোধ করে ওই লরিচালক ও অন্যান্য গাড়ির চালকরা। অবরোধের জেরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। এক অসুস্থ রোগী হাসপাতালে যাওয়ার পথে অবরোধে আটকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পুলিশের তরফে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ঘণ্টাতিনেক অবরোধ চলার পর পুলিশের আশ্বাসে তা ওঠে।
রাস্তায় গাড়ি আটকে কালীপুজোর চাঁদার জুলুম নিয়ে দুই দিন আগেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদ প্রতিদিনে। পুলিশের তরফে ধারাবাহিক অভিযানের কথা জানানো হয়েছিল। অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। তবে এদিন চাঁদার জুলুমের ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) প্রিয়ব্রত রায় এদিন জানিয়েছেন, চাঁদার জুলুম আটকাতে পুলিশের একটি দল গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তেলিপুকুর এলাকার ঘটনায় কারা চাঁদা তুলছিল তাদের খোঁজ চলছে বলে তিনি জানান।
[ডুয়ার্সে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলোয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, সাসপেন্ড ২ ইঞ্জিনিয়ার]
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের তেলিপুকুর মোড় থেকে আরামবাগ রোডে সদরঘাট সেতু পর্যন্ত কম করে ৫ জায়গায় গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ভোর থেকে। এদিন সকালে বাজেপ্রতাপপুর এলাকা থেকে মুড়ি বোঝাই করে লরি নিয়ে যাচ্ছিলেন শেখ সাহেব। সদরঘাট সেতু ওঠার আগে তাঁর লরি আটকে একদল যুবক মোটা অঙ্কের চাঁদা চায়। তিনি বলেন, “৪-৫ জন লরি আটকে মোটা টাকা চাঁদা চায়। আমি ১০ টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা নিতে অস্বীকার করে। তর্ক জুড়ে দেয়। গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয়। আমাকে নামিয়ে ব্যাপক মেরেছে।” সেই সময় আরও কয়েকটি গাড়ি আটকানো হয়েছিল ওই রাস্তায়। তাঁরা সকলেই প্রতিবাদ করেন। এরপরই সাহেব গাড়িটি রাস্তায় আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে দেন। রাস্তায় শুয়েও পড়েন। অন্যান্য চালকরাও গাড়ি দাঁড় করিয়ে অবরোধে সামিল হন।
অবরোধের জেরে বর্ধমান-আরামবাগ রোড ছাড়িয়ে যানবাহনের লাইন পড়ে যায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে তেলিপুকুরের অ্যাপ্রোচ রোডেও। যানজট হয় জাতীয় সড়কেও। তীব্র যানজটে দু্র্ভোগে পড়েন যাতায়াতকারীরা। বর্ধমান থানা থেকে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয়নি। এদিকে, খণ্ডঘোষের মেটেডাঙা গ্রাম থেকে শেখ কলিমুদ্দিন তাঁর বাবা শেখ আবদুল রাজ্জাককে বর্ধমানে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসছিলেন। এক ঘণ্টার বেশি অবরোধে আটকে থাকেন তাঁরা। আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজ্জাক। তাঁকে একটি চায়ের দোকানে শুইয়ে দিয়ে প্রাথমিক শুশ্রূষা করা হয়। পরে হাইওয়ের ট্রাফিক ওসি ছোটলাল প্রসাদ রাজ্জাককে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এসে। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। অবরোধকারীদের বোঝান তাঁরা। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
[প্রেমে আপত্তি মেয়ের পরিবারের, যুবককে পিটিয়ে খুন]
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.