সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রেললাইনের ধারে ঘাসের ঝোপ থেকে নরকঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মশাগ্রামে। কঙ্কালের সঙ্গে পাওয়া পোশাক, ট্রেনের পুরনো টিকিট, আধার কার্ডের কপি-সহ অন্যান্য নথি থেকে অনুমান, সেটি দেওয়ানদিঘি থানার ভাণ্ডারডিহি গ্রামের নিখোঁজ যুবক সৌমেন ঘোষের (২৩)। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার জামালপুর থানায় গিয়ে সৌমেনের বাবা প্রতাপ ঘোষ দেহ শনাক্ত করেন। কীভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ওই যুবককে খুন করা হয়েছে না কি ট্রেন থেকে পড়ে মারা গিয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বর্ধমান সদর দক্ষিণের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আমিনুল ইসলাম খান জানান, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। খুনের কোনও প্রমাণ বা নিদর্শন এখনও পর্যন্ত মেলেনি। যে জায়গায় দেহটি পড়েছিল তার থেকে কিছুটা দূরে রেলের একটি ঘর রয়েছে। কর্মীরা থাকেন। তাঁরাও কোনও সূত্রে দিতে পারেননি যাতে খুন বা ওই সংক্রান্ত কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে। মৃতদেহে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তার পর বোঝা যাবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মশাগ্রাম স্টেশনের কাছে রেললাইনের ধারে একটি ঝোপে কঙ্কাল পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন। তাঁরা ওই এলাকায় গরু চড়াতে গিয়েছিলেন। মশাগ্রাম থেকে বর্ধমান শাখা ও বাঁকুড়া শাখার রেললাইনের মাঝের একটি ফাঁকা জায়গায় ঘাসের ঝোপের মধ্যে কঙ্কালটি পড়েছিল। রাতে পুলিশ গিয়ে তা উদ্ধার করে। পরনে জামা-প্যান্ট, জুতো ছিল। প্যান্টের পকেটে ১৫ সেপ্টেম্বর বারুইপুর থেকে বর্ধমানের একটি টিকিট, আধার কার্ডের কপি, মানিব্যাগ ছিল। সেই সূত্রে জামালপুর থানার পুলিশ দেওয়ানদিঘি থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এদিন সকালে সৌমেনের বাবা দেহ শনাক্ত করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন সৌমেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার মাধ্যমে সেখানে কাজে যান। সৌমেনের ভাই সুমনও কাজ করতেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তার দুইদিন আগে অবশ্য সুমন বাড়ি চলে এসেছিলেন। বারুইপুর থেকে ট্রেন ধরলেও আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন পরিবারের তরফে দেওয়ানদিঘি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। পরে পুলিশের কাছে অপহরণেরও একটি অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোনও সূত্র থেকেই সৌমেনের সন্ধান মেলেনি। শুক্রবার রাতে কঙ্কাল উদ্ধার হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ১৫ সেপ্টেম্বরই সৌমেনের মৃত্যু ঘটে থাকলে এতদিন ধরে দেহ সেখানে পড়ে থাকল কিন্তু কারও তা নজরে পড়ল না সেটা বিস্ময়ের। এমনকী দুর্গন্ধও কাছাকাছি থাকা রেলের ভবনের কর্মীদের কাছে পৌঁছল না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.