মা ও দিদির সঙ্গে অনীশ। ছবি: জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: তখন ছিল মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। জানা যায় শরীরে দানা বেঁধেছে ক্যানসার। কাটোয়ার অসীমবাবু বুঝতে পেরেছিলেন তিনি হয়তো বেশি দিন পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবেন না। মৃত্যুশয্যায় ছেলে অনীশের হাত ধরে বলেছিলেন, “মন খারাপ করিস না। তোকে অনেক লড়াই করতে হবে। ভালো করে পড়াশোনা করবি। আমার স্বপ্ন তোকেই পূরণ করতে হবে।”
গত ২৯ ডিসেম্বর চরম বিপর্যয় নেমে আসে কোনার পরিবারে। মারা যান অসীমবাবু। ‘বটবৃক্ষ’ হারিয়ে মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসে অনীশ কোনার। বাবাকে দেওয়া কথা সে রেখেছে। এবছর মাধ্যমিকে ৬৮৪ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে মেধাতালিকার দশম স্থান দখল করেছে অনীশ। শুধু সময় দেননি বাবা। অনীশের কথায়, “বাবা আমাকে কোনও কিছুর অভাব বুঝতে দেননি। তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। তবে শুধু বাবার কথাটাকেই স্মরণ করে মনটাকে শক্ত করে পড়াশোনা করে গিয়েছি। বাবার আশীর্বাদেই সফলতা পেয়েছি।”
কাটোয়ার (Katwa) কলেজপাড়ার বনফুলের মাঠ এলাকায় বাড়ি অনীশ কোনারের। কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের ছাত্র। মা তনুশ্রী কোনার গৃহবধূ। দিদি শ্রীময়ী সংস্কৃত অনার্স নিয়ে কলকাতায় (Kolkata) পড়াশোনা করছেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অনীশের বাবা অসীমবাবু কটোয়ায় স্কুল পরিদর্শক অফিসে চাকরি করতেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। তনুশ্রীদেবী বলেন, “স্বামী অবসর গ্রহণের কয়েকমাস পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছিল। পরে ধরা পরে শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। তার পর আর বাঁচানো যায়নি।” ছেলের মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার খবর শোনার পর তনুশ্রীদেবী বলেন, “ছেলেটা ওঁর বাবার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছে এটাই আমার সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা।”
অনীশের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। তার মধ্যে বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ৯৮, অঙ্কে ৯৯, ভৌতবিজ্ঞানে ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৬, ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনীশ স্কুলে কোনওদিনই প্রথম তিনজনের মধ্যে ছিল না। তবুও সে অন্যান্য সহপাঠীদের টপকে মাধ্যমিকে স্কুলের সেরা। কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষক কমলকান্তি দাস বলেন, “পিতৃবিয়োগের মতো বিপর্যয়ের পরেও অনীশ এত ভালো ফল করেছে এটা আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা। ওকে কুর্নিশ জানাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.