বর্ধমানে সহেলা পরবে চলছে মালাবদলের পালা।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বন্ধুত্বের সম্পর্ক ধরে রাখতে মালাবদল। এক মেয়ে আর একে মেয়ের সঙ্গে মালাবদল করছেন। এক ছেলে আর এক ছেলের সঙ্গেও একইভাবে মালাবদল করছেন। কেউ ফুলের মালা কেউ আবার শোলার মালা দিয়ে। মনে হতেই পারে, সমলিঙ্গের বিয়ে হচ্ছে। এখন তো চারিদিকেই ঘটছে। কিন্তু না, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব বর্ধমানের একাংশে এরকম রীতি প্রচলিত রয়েছে। তবে এখানকার মালাবদল বিবাহবন্ধনের প্রতীক নয়। এটি বন্ধুত্ব অটুট রাখার মালাবদল। নতুন বন্ধু পাতানোর অঙ্গীকারের প্রতীক। পাশ্চাত্যের ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের মতই গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতির এক অঙ্গ এই মালাবদল পরব। পোশাকি নাম সহেলা উৎসব। আর সেই উৎসবে যোগ দিয়েই বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন মানুষজন। যেখানে বয়সের কোনও বাধা নেই। বন্ধুত্ব করতে চাইলে শুধু সহেলা উৎসবে এসে মালাবদল করলেই হবে।
পূর্ব বর্ধমানের রায়না, খণ্ডঘোষ ব্লক, পাশের জেলা বাঁকুড়ার একাংশেও এই সংস্কৃতি রয়েছে। বছরের বিশেষ সময়ে এই সহেলা উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। মূলত মনসাপুজোকে সামনে রেখে এইসব এলাকায় প্রচলিত এই সহেলা উৎসব। কোথাও ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে সহেলা উৎসব।আবার কোথাও এই উৎসব রজতজয়ন্তী পালন করে সুবর্ণজয়ন্তীর পথে এগিয়ে চলেছে। রায়না-১ ব্লকের বাজিতপুরের তেলার পাড়ে এবারের সহেলা উৎসবে মাতেন বাসিন্দারা। গ্রামের এক প্রান্তে মনসার থানে মূর্তি এনে পুজো হয়। পাশাপাশি, সহেলা উপলক্ষে প্রচুর জনসমাগম হয়। মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও যাত্রাপালার ব্যবস্থাও থাকে।
এবারের সহেলা পরবেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। উৎসব প্রাঙ্গণে বিভিন্ন বয়সের পুরুষ-মহিলার ভিড়। অনেকের হাতেই ফুলের মালা, শোলার মালা।গণবিবাহের আসর ভেবে ভ্রম হওয়া স্বাভাবিক। কিছু পরেই অবশ্য ভুল ভাঙে। দেখা যায় মহিলারা একে অপরের সঙ্গে মালাবদল করছেন। একই কাজ করতে দেখা যায় পুরুষদেরও। বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা ধনঞ্জয় পাল জানান, গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই এই উৎসব হয়ে থাকে। এখানে বন্ধুত্বকে মজবুত করতে এই মালাবদলের রীতি রয়েছে।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.