ধীমান রায়, কাটোয়া: কার্তিক অমাবস্যায় উৎসব ফেরে এই জনপদ। তবে এই উছ্বাস, আনন্দের মধ্যেও দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ফিরে আসে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের সাগিরা গ্রামে। এখনও রয়ে গিয়েছে গ্রামে রয়ে গিয়েছে সেই ধ্বংসের ছবি। বহু বাড়ি ভাঙা। ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে বিদ্যুতের খুঁটি। রয়েছে গ্রামের সেই বারোয়ারি কালীমন্দিরটিও। তবে ভগ্নপ্রায়। যে গ্রাম আজ জনমানবহীন। ২০০০-এর বন্যায় আস্ত গ্রাম কার্যত জলের তলায় ছিল।
[দীপাবলি উৎসব নিয়ে এই কাহিনিগুলি জানলে অবাক হবেন]
কালীপুজো এলেই ১৭ বছর আগের দুঃস্বপ্ন ফিরে আসে সাগিরা গ্রামে। তবে গ্রাম ছাড়ার সময় বাসিন্দারা মাথায় করে এনেছিলেন কালী প্রতিমার কাঠামোটি। দুর্যোগের পর ওই এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠে বর্তমান গ্রামটি। কালীপুজো এলে পুরানো সাগিরা গ্রাম সেই হাহাকারের স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় অজয় নদের তীরে এই সাগিরা গ্রাম। বর্তমানে যেখানে গ্রামটি রয়েছে সেখানে ছিল না কোনও জনবসতি। গ্রামটি ছিল অজয়ের আরও কাছে। প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস ছিল। গ্রামবাসী সুব্রত দাসের কথায়, ২০০১ সালে নদীর বাঁধ ভেঙে পুরো গ্রাম ভেসে গিয়েছিল। কালীপুজোর কিছুদিন আগে সেই বিপর্যয় ঘটেছিল। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিলেন ৯ জন গ্রামবাসী। তাদের আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি।
[সতীর পীঠ অট্টহাস সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন কি?]
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন্যার সময় যে যারমতো করে প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র চলে যান। কিছু জিনিসপত্র যেমন মাথায় করে এনেছিলেন, তেমনই বন্যার সময় মা তারার মূর্তির কাঠামো সঙ্গে করে নিয়ে চলে এসেছিলেন। তারপর পুরানো গ্রাম থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নতুন করে সাগিরা গ্রামটি গড়ে উঠেছে। আগের মতো বারোয়ারি কালীপুজো হয় ধুমধাম করে। গভীর রাতে পুজো হয়। পুজো শেষে গ্রামবাসীরা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। তবে পুজোর সময় উৎসবের পাশাপাশি টাটকা হয়ে ওঠে সেই প্রলয়ের স্মৃতি। কালীপুজোয় সেই পুরোনো কালীমন্দিরে গিয়ে রাতের বেলায় ধূপ, মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। আর নিশি রাতে এখনও যেন তাদের কানে ভাসে হাহাকারের চাপা সেই আওয়াজ।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.