সৌরভ মাজি, বর্ধমান: প্রাণের থেকে কি ধর্ম বড়? হিন্দু না মুসলিম ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বেলা গড়াল। দেড় দিন ধরে বৃদ্ধার দেহ পড়ে রইল পথেই। সৎকারের কোনওরকম বন্দোবস্ত হল না। শেষপর্যন্ত দেহ তুলে নিয়ে গিয়ে মর্গে ঠাঁই দিয়েছে পুলিশ। মৃতের পরিজনদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেউ দেহের দাবি না জানালে প্রশাসনের তরফ থেকেই সৎকারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বৃদ্ধার নাম ভবানী শেখ(৬২)। অমানবিক ঘটনাটির সাক্ষী বর্ধমান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভবানীদেবী পেশায় পরিচারিকা। তাঁর সেই অর্থে কেউই নেই। অনাত্মীয় মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে বর্ধমান শহরের বীজ নিগমের এক পরিত্যক্ত ঘরে থাকতেন। মঙ্গলবার রাতে সেই ঘরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানেই সম্ভবত তাঁর মৃত্যু হয়। সারারাত পরিত্যক্ত ঘরটিতে পড়ে থাকলেও সকালে কেউ বা কারা দেহটিকে রাস্তায় বের করে দেয়। বুধবার দিনভর রাস্তায় পড়েছিল ভবানীদেবীর মৃতদেহ। সবাই দেখেছে। কিন্তু কেউই সৎকারের উদ্যোগ নেয়নি। উলটে তৈরি হয়েছে জল্পনা। অনাত্মীয় মানুষেরও সৎকার হয়। তবে ভবানীদেবীর প্রসঙ্গ আলাদা। তিনি হিন্দু না মুসলমান সেটাই ঠিকমতো কেউ জানে না। তাই কোন ধর্মমতে সৎকার হবে ঠিক হয়নি। বুধবার রাত ১২.৪৫ মিনিটে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দার। এরপর দেহটিকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা ভবানীদেবীকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য দেটিকে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের আত্মীয়দের খোঁজখবর করা হবে। না পাওয়া গেলে সৎকারের বন্দোবস্ত করা হবে। জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন ভবানীদেবী। তবে ১৯৯৪-৯৫ সালে মুসলিম ধর্মাবলম্বী গিয়াসুদ্দিন শেখের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে চলে যান গিয়াসুদ্দিন শেখ। এরপর থেকে একাই ছিলেন ভবানী শেখ। এই ঘটনার পরে ফের বিয়ে করেন গিয়াসুদ্দিন। বর্তমানে ভাতার থানার মুরাতিপুর গ্রামে নতুন সংসারও রয়েছে তাঁর। এদিকে গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে ভাঙলেও তাঁকে হিন্দু বলে মেনে নিতে নারাজ অনেকে। কেউ বলছেন মুসলিমকে বিয়ে করে তাঁর ধর্ম বদলেছে। কারওর দাবি গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হলেও ধর্ম পরিবর্তন করেননি ভবানীদেবী। তবে কোনটা যে প্রকৃত সত্যি সেটা কেউই জানে না। তাই ধর্মে গেরোয় বাধা পড়ে অন্ত্যেষ্টি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.