সৌরভ মাজি, বর্ধমান: গ্রামের বড় উৎসব গাজন। যেখানে দুর্গাপুজোর থেকেও ধুম বেশি। সেখান থেকেই বাবা নিজের সাধ্য মতো দুই মেয়ের জন্য একই জামা কিনে এনেছিলেন। কিন্তু তা বিশেষ পছন্দ হয়নি বড় মেয়ের। একই জামা নিয়ে আপত্তিও জানায় সে। আর তাই নিয়ে বাবার সঙ্গে শুরু হয় মনমালিন্য। অভিমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে শেষমেশ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় বছর ষোলোর ওই কিশোরী। বিফলে গেল বাবার স্নেহ।
ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট থানার নসরৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিংড়া গ্রামে। মৃত ছাত্রীর নাম সান্ত্বনা রায়। স্থানীয় জালুইডাঙা গোপালচন্দ্র পাল বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। সোমবার রাতে বাড়িতেই একটি ঘরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন পরিবারের লোকজন। দরজা ভেঙে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কিশোরীকে মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের সময় হাসপাতালে হাজির ছিলেন বাবা সমীর রায়। তিনি পেশায় খেতমজুর। তাঁর দুই মেয়ে। সান্ত্বনা বড়। ছোট মেয়ে রঞ্জনা।
গ্রামে গাজন হয় খুব ধুমধাম করে। সেই উপলক্ষে বিশাল মেলাও বসে। সেখানের মূল আকর্ষণ জলের তলায় থাকা শিবলিঙ্গ। গাজনের সময় তা তুলে আনা হয় জল থেকে। সমীরবাবু জানান, গাজন উপলক্ষে তাঁর দুই মেয়ের জন্য একই রকমের জামা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু দুই বোনের জন্য একই জামা আনায় তা পছন্দ হয়নি সান্ত্বনার। সমীরবাবু বলেন, “জামা পছন্দ না হওয়ায় মন খারাপ করেছিল বড় মেয়ে। ওকে বলেছিলাম আমার যা সামর্থ্য তাই এনেছি। আমার চোখে দুই মেয়েই সমান। তাই একই জামা এনেছি।” এছাড়া আর কোনও কথা হয়নি। তারপরই ঘটে সেই ঘটনা। সোমবার রাতে তিনি কাজ সেরে বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি। তখন জানলা দিয়ে দেখেন সিলিং থেকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে সান্ত্বনা। তাঁরা দরজা ভেঙে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। জামা পছন্দ না হওয়ার কারণে এইভাবে আত্মঘাতী হবে মেয়ে তা কল্পনাও করতে পারছেন না সমীরবাবু। শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.