সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দিল্লির দূষণ নিয়ে চিন্তিত গোটা দেশ। আর তারই মধ্যে দিল্লিকেও ছাপিয়ে গেল বর্ধমান ও আসানসোল। গত কয়েকদিন ধরেই পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের দুই জেলা সদরের দূষণের মাত্রা রাজধানীর দূষণ মাত্রাকে টপকে গিয়েছে। বুধবার সেই মাত্রা দিল্লির তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল। তবে জেলার শিল্পশহর হিসেবে পরিচিত দুর্গাপুরের দূষণ মাত্রা আশ্চর্যজনকভাবে তুলনামূলক কম।
পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কেন্দ্রীয় এই সংস্থার মাপকাঠিতে বুধবার বিকেল ৩টে পর্যন্ত আসানসোলের গড় দূষণ মাত্রা (এয়ার ইনডেক্স) ছিল ৩১৪। সেখানে দিল্লির আনন্দবিহারের গড় দূষণ মাত্রা ছিল ২৬৫। অর্থাৎ দিল্লির দূষণকে নিঃশব্দেই ছাপিয়ে গিয়েছে আসানসোল। আবার গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে বায়ু দূষণের বিভিন্ন উপাদান ভিত্তিক (প্রমিনেন্ট পলিউটান্ট বা পিএম) তথ্যও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। সেই হিসেবে পিএম ২.৫ গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে সর্বোচ্চ ৩৯৯ ও সর্বনিম্ন ২৬৫। আসানসোলের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৩৬২ ও ৩১৪। পিএম ১০ দিল্লিতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ছিল ৩৫৮ ও ২৩৬। আসানসোলে তা ছিল যথাক্রমে ২৮৬ ও ২১২।
কেন্দ্রীয় এই সংস্থার হিসেবে আসানসোলের বায়ুতে ওজোনের মাত্রা সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ছিল ৭৮ ও ৪৮। সেখানে দিল্লিতে মাত্র ৪৬ ও ২২। আবার নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মাত্রা দিল্লিতে ছিল ১৮০ ও ১২৯। আসানসোলে তা ছিল যথাক্রমে ৮৮ ও ৫৬। এদিকে, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেবে এদিন আসানসোলের বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ৩৩৯। পিএম ২.৫ ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে দুর্গাপুরে এদিন সেই মাত্রা ১৯। সেখানে বায়ু থেকে সবচেয়ে বেশি দূষিত পদার্থ ছিল সালফার ডাই-অক্সাইড। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মতে, দূষণ মাত্রা কম থাকায় দুর্গাপুরের বায়ুকে ভাল বলে অভিহিত করা হয়েছে।
বেসরকারি অনেক সংস্থার তরফে অনলাইনে দেশের বিভিন্ন শহরের দূষণ মাত্রার যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে বর্ধমান-আসানসোল রাজধানী দিল্লিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুরের অবস্থা সেখানে অনেকটাই ভাল। এয়ার-কোয়ালিটি নামে একটি সংস্থা জানাচ্ছে, এদিন দিল্লির দূষণ মাত্রা ছিল ১৭৪। আসানসোল ও বর্ধমানে সেই মাত্রা ছিল ১৭৭। সেখানে দুর্গাপুরের মাত্রা মাত্র ১৫। দূষণের ফলে দিল্লির বাতাস ধোঁয়াশায় ভরে থাকছে। মঙ্গলবার বর্ধমানেও দিনভর প্রায় একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান নবকুমার মণ্ডল সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, বায়ু দূষণের ফলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরিবেশকে বাঁচাতে সকলকেই সচেতন হতে হবে। দূষণের কারণেই যে ধোঁয়াশা হচ্ছে না তা উড়িয়ে দেননি। জ্বালানি পোড়ালে, কলকারখানার ধোঁয়ার পরিমাণ বাড়লেই ধোঁয়াশা বাড়বে। তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুরের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.