ধীমান রায়, কাটোয়া: যতই আইন করা হোক না কেন, কঠোর সাজার জুজু দেখিয়ে থামানো যাচ্ছে না শিশুনিগ্রহ। এবার ঠাকুমার হাতেই যৌন নিগ্রহের শিকার পাঁচ বছরের নাতনি। এমনই অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতা শিশুরা মা এনিয়ে কাটোয়া থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। ওই গৃহবধূর অভিযোগ, তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাঁচ বছরের মেয়ের উপরে যৌন নির্যাতন চালিয়ে গিয়েছে শাশুড়ি। শিশুটিকে মঙ্গলবার কাটোয়ার এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান ওই গৃহবধূ। সেখানে চিকিৎসক ওই শিশুর যৌনাঙ্গ থেকে কন্ডোমের অংশ বের করেছেন। এরপরেই মেয়ের কাছে ঘটনার কথা শুনে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন মা। এদিকে অভিযোগের খবর পেয়েই পলাতক ঠাকুমা মীরা দাস(৫৬)। নির্যাতিতা শিশুটির বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কাটোয়া শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কবিরাজ পাড়ায় ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি। বাপের বাড়ি শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গামন্দির পাড়ায়। বছর ছয়েক আগে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীরা দু’ভাই। তবে ভাসুররা আলাদা থাকেন। শাশুড়ি, স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে গৃহবধূর সংসার। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদানিং স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না গৃহবধূর। তাঁর অভিযোগ, স্বামীর সঙ্গে এক মহিলার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে মাস ছয়েক ধরে অশান্তি চলছিল। ফলে মাঝেমধ্যেই ওই গৃহবধূ মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেতেন। আবার ক’দিন কাটানোর পর শ্বশুরবাড়ি আসতেন। এভাবেই চলছিল। এরই মধ্যে অভাব অনটনের কারণে স্থানীয় একটি দোকানে কাজ নিতে হয় ওই গৃহবধূকে। তিনি বলেন, ‘আমাকে বাইরে কাজ করতে হয়। তাই মেয়েকে তার ঠাকুমার কাছে রেখে কাজে যেতাম। কয়েকদিন ধরেই দেখছি মেয়েটা কেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর দেখি মেয়ের যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে। যন্ত্রণায় কাঁদছে। সঙ্গে সঙ্গে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসক আমায় জানান মেয়ের ওপর দিনের পর দিন যৌন নির্যাতন হয়েছে।’ গৃহবধূর দাবি, দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় মেয়ের যৌনাঙ্গ থেকে কিছু বের করেন চিকিৎসক। এরপরই মেয়ের যন্ত্রণা কমে। মেয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করায় তখন ও সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। ঠাকুমাই তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে গিয়েছে। আমার মেয়েকে তিলে তিলে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই শ্বাশুড়ি পরিকল্পনামাফিক এই ঘটনা ঘটিয়ে গিয়েছেন।’ এই ঘটনায় স্বামীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন ওই গৃহবধূ। শিশুটির বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ঠাকুমা পলাতক। কাটোয়া থানার ওসি সঞ্জীব ঘোষ বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্তের সন্ধান চালানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ওই প্রৌঢ়াই শুধু শিশুটির ওপর নির্যাতন চালাতেন, নাকি তাঁর ইন্ধনে আর কেউ নির্যাতন করত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.