বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণগঞ্জ: তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের হত্যাকাণ্ড পুরোপুরি রাজনৈতিক। তবে পরিবারের পাশে সর্বতোভাবে রয়েছে রাজ্য প্রশাসন। পরিবারের সদস্যরা যেন নিজেদের অসহায় মনে না করেন। রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে গোটা ঘটনায় এমনই প্রতিক্রিয়া তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, এমন হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা রয়েছেন তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তবে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দলের কর্মীরা যেন কোনও প্ররোচনায় পা না দেন, সেই পরামর্শও দিয়েছেন দলের মহাসচিব। এদিন তিনি নিহত বিধায়কের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে, কথা বলে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ফোন করেছেন সত্যজিতের স্ত্রী রূপালি বিশ্বাসকে। পরিবারের দায়িত্ব নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর পরামর্শ, পরিবারের কেউ যেন নিজেদের অসহায় মনে না করেন। দোষীদের চরম শাস্তিদানের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে নদিয়ার সর্বত্র সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্মরণে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। দলীয় কার্যালয়গুলিও বন্ধ থাকবে।এছাড়া আগামী ১২ তারিখ জেলায় ধিক্কার মিছিল করবে তৃণমূল। ২৪ তারিখ হবে জনসভা।
হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিআইডি-কে। দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমেছে সিআইডি। রবিবারই ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও। তাঁরা পরিবারের সদস্যদের কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছে। এদিন সকালে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর নিহত বিধায়কের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগরের পার্টি অফিসে। সেখানে দলের কর্মী, সদস্য, সমর্থকরা শেষশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপর সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় হাঁসখালির ফুলবাড়ি-মাজদিয়া এলাকার সেই মঞ্চে, যেখানে শনিবার গুলিবিদ্ধ হন সত্যজিৎ বিশ্বাস। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জেলার পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল সেখানেই তাঁর মরদেহ মাল্যদান করেন। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নিহতের মাথায় ২টি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। একটি গুলি বিধায়কের মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেছে বলে মনে করা। তবে খুলির ভেতরে কোনও ক্ষত নেই। গতকাল ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া একটি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেটাই খুনের অস্ত্র কি না, তা বুঝতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
মতুয়া মহাসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন দলের তরুণ নেতা তথা এলাকার যুব জনপ্রতিনিধি সত্যজিৎ বিশ্বাস। ঠাকুরনগর ছাড়া যে জেলায় মতুয়াদের খানিকটা আধিপত্য রয়েছে, তা এই নদিয়া। তবে সেই সংগঠনের মধ্যেও অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে। অনেকেরই ধারণা, মতুয়াদের গোষ্ঠীকোন্দল কিম্বা এলাকা দখলের প্রতিযোগিতার মাঝে পড়ে খুন হতে হয়েছে বিধায়ককে। তৃণমূলের মতো বিধায়কের স্ত্রীও খুনের পিছনে আঙুল তুলেছেন বিজেপির দিকেই। তাঁর কথায়, দিন কয়েক আগে স্বামী তাঁকে জানিয়েছিলেন যে দলের কয়েকজন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা সকলে সত্যজিৎ বাবুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। স্ত্রী রূপালির অভিযোগ, ওই ঘনিষ্ঠদের মধ্যেই কেউ বিধায়ককে সরিয়ে দিতে ফুল প্রুফ প্ল্যান করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.