ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: শনিবার রাতে বুলবুলের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে চারিদিক। তছনছ হয়ে গিয়েছে সাজানো ঘর। বাইরে প্রচণ্ড ঝোড়ো হওয়া বইছে। ধপাধপ গাছের ডালও পড়ছে। প্রাণে তো বাঁচতে হবে। বাঁচাতে হবে খুদে প্রাণটিকেও। অতঃপর অবস্থা বেগতিক দেখে রসদ মজুত রাখার কাঠের বাক্সে আশ্রয় নিল পরিবারের ক’জন। সঙ্গে ১৫ দিনের সদ্যোজাত। দুর্গতদের এমন অসহায় অবস্থার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরলেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
সেদিন রাতে ওই কাঠের বাক্সের ভিতর আশ্রয় না নিলে হয়তো ঘরের চাল চাপা পড়ে মৃত্যুই ঘটত পাথরপ্রতিমার দুর্গত ওই পরিবারের শিশুটির, এমনটাই বলছিলেন শনিবার রাতে বুলবুলের প্রচণ্ড তাণ্ডবের সাক্ষী থাকা ওই অসহায় পরিবারের এক মহিলা। কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের শেয়ার করা ভিডিওগুলিতে এমন ঘটনাই উঠে এল।
শনিবার বুলবুলের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন এলাকা। হাজার-হাজার মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। যার ফলে গৃহহীন অনেকেই। একাধিক এলাকায় ছিঁড়ে পড়েছে বিদ্যুতের তার। উপড়ে গিয়েছে খুঁটি। ফলে, সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত ওই দুই বিধানসভা এলাকা। রিক্ত মানুষ সব হারানোর বুকভরা বেদনা নিয়ে জড়ো হয়েছেন বাঁধের উপরে। তাঁদের মুখ থেকে জীবনের অনন্য অভিজ্ঞতা শুনে নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন সিপিএম নেতা। এলাকা পরিদর্শন করে এবং দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করে তিনিই জানালেন, সেই রাতে রসদ মজুত রাখার কাঠের বাক্সে আশ্রয় না নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকলে প্রাণে বাঁচত না ওই শিশু। শুধু ওই শিশুই নয়, ওই একই বাক্সে ঘুর্ণীঝড়ের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছিলেন দু’টি পরিবারের মোট ৮ জন।
কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় আরও জানান, বুলবুলের কবলে পড়া মানুষগুলির সঙ্গে কথা বলে হার না মানা জীবনীশক্তি নিয়ে ফিরলেন তিনি। এলাকা পরিদর্শনের সেই স্মৃতি নিয়েই তিনি পোস্টে লেখেন, “সব হারিয়েও যারা আবার ঘর বাধার প্রত্যাশায় বলীয়ান, তাঁরাই নিয়ে গেল ঝাউবনের কাছে। মনে করিয়ে দিল- বাবু, মনে পরে আমাদের সবাইকে নিয়ে আয়লার পরে তুমি এই ঝাউগাছগুলো লাগিয়েছিলে। হাজার হাজার গাছ লাগানো হয়েছিল। ছেলে বুড়ো, খুড়ো-খুড়ি, সবাই ছিলাম আমরা সেই গাছ লাগিয়ের দলে। তুমি বলতে এই বন তোদের বাঁচাবে। গিয়ে দেখলাম, ঝাউ বনের ৮০ শতাংশ গাছ ভেঙে গিয়েছে এই ঝড়ে। আমি একটু বিষন্ন, তান্ডবলীলার প্রমানের উপর চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম, হঠাৎ গ্রামের একটি বউ বললো, মন খারাপ কোরো না দাদু, এই বন আবার আমরা গড়ব, আবার নতুন করে গাছ লাগাব। হ্যাঁ, ওরা পারে। যারা সব হারিয়ে বাক্সবন্দি হয়ে সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ জিতে নেয়। তাঁদের কাছে এমন প্রত্যাশাই তো রাখা যায়”, বললেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। বর্ষীয়ান এই সিপিএম নেতা আহ্বান জানিয়েছেন সকলকে দু্র্গত মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.