ছবি: প্রতীকী
স্টাফ রিপোর্টার: কিডনি বেচতে চেয়ে সরাসরি ফেসবুকে পোস্ট। চমকে দেওয়ার মতোই খবর। যেখানে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেখানে এই ধরনের পোস্ট করলেন কী করে? কারা কিনতে চান কিডনি? তিনিই বা বিক্রি করতে চান কেন?
করোনা সংক্রমণের আবহে লকডাউনের বাজারে এই পোস্ট ঘিরে চারদিক তোলপাড়।
যিনি কিডনি বিক্রি করতে চান, তিনি বিএসএনএলের ঠিকাকর্মী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির বাসিন্দা ওই যুবক সঞ্জিত অধিকারী এখন সকালে জানেন না বিকেলে চলবে কী করে। তাঁর কান্নাভেজা অথচ অকুতোভয় জবাব, “জানি এটা অপরাধ। কিডনি দান করা যায়, বিক্রি নয়। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে, যাঁরা এ নিয়ে এত কথা বলছেন, তাঁরা জানেন, আমার সাড়ে পাঁচ বছরের সন্তান দুধ পায় না। জল বিস্কুট খায়। স্ত্রীর সমস্ত গয়না হয় বন্ধক রেখেছি বা বিক্রি করে দিন চালাচ্ছি। এমন হতভাগ্য স্বামী আমি। বৃদ্ধ বাবার ওষুধ কিনতে হাত পাততে হয়। সন্তান হিসাবে লজ্জা হয় আমার। গত এক বছরের বেশি এক পয়সা মাইনে পাইনি। আদালতের কথা শোনেনি কর্তৃপক্ষ। বলুন তো কিডনি বিক্রি করতে চেয়ে কোন অন্যায়টা করেছি?”
সঞ্জিৎবাবু উদাহরণ মাত্র। বিএসএনএলের কলকাতা ডিভিশনের প্রায় পাঁচ হাজার এবং বেঙ্গল সার্কেলের কয়েক হাজার ঠিকাকর্মী মাইনে পাচ্ছেন না। ধরনা, বিক্ষোভ আন্দোলন করেছেন তাঁরা। কর্মীদের সংগঠন ন্যাশনালিস্ট ঠিকা ওয়ার্কার্স কংগ্রেস আদালতে মামলা করে জিতেছে। আদালত ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাইনে মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেও এপ্রিল পর্যন্ত সেই টাকা পেয়েছেন কর্মীরা। তারপর এক টাকাও মিলছে না। বরং তাঁদের ছাঁটাইয়ের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিলাব হালদার। তিনি বলেন, “আমাদের অধিকাংশের পরিবার কার্যত পথে বসেছেন। এখন নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করে আমাদের কর্মীদের হাতে চাল, আলু-সহ নানা সামগ্রী তুলে দিতে হচ্ছে। না হলে তাঁরা খেতে পাবেন না। কতটা অসহায়তার সঙ্গে দিন কাটছে তা বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের এক সদস্য কিডনি বিক্রি করতে চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। এর চেয়ে অমানবিক আর কী হতে পারে?”
শুধু বেতন নয়, পিএফ, ইএসআই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অথচ তাঁরা এখনও নিয়মিত কাজ করে চলেছেন। পরিষেবা দিচ্ছেন। বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, ঠিকাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সরকারি সংস্থাটির কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এর দায় পুরোটা তাদের উপর বর্তায় না। যিনি কিডনি বেচতে চেয়েছেন, সেই সঞ্জিৎবাবু বলেন, “আমরা এখন না ঘরকা, না ঘাটকা। তাই বোধহয় মৃত্যুই শ্রেয়। অথবা কিডনি বেচে যতদিন বেঁচে থাকা যায়। বাঁচিয়ে রাখা যায় পরিবারকে। বেঁচে থাকলে তবেই না আইন!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.