গৌতম ব্রহ্ম: ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যেই চিকিৎসকদের ধন্দ বাড়িয়ে রাজ্যে হানা দিল আর এক মারণ জীবাণু ‘ব্রুসেলা’। স্ক্রাব টাইফাসের ধাঁচে, ডেঙ্গুর ছদ্মবেশ নিয়ে সে ছোবল বসাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
ব্রুসেলা ব্যাকটিরিয়ার হানাদারিতে সম্প্রতি আরামবাগের এক বাসিন্দা অজানা জ্বরে আক্রান্ত হন। মাথা ধরা, গাঁটে ব্যথা, র্যাশ বেরোনো। ডেঙ্গুর মতোই উপসর্গ উপস্থিত ছিল রোগীর শরীরে। এমনকী, প্লেটলেটও কমে যাচ্ছিল রোগীর রক্তে। ডেঙ্গু বলেই ভেবে নিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু। রক্ত পরীক্ষার পর ভুল ভাঙে। জানা যায় ভাইরাস নয়, রোগীর শরীরে বাসা বেঁধেছে ব্রুসেলা ব্যাকটিরিয়া। রোগের নাম ‘ব্রুসেলোসিস’। রোগী মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সময়মতো ডাক্তারবাবু রোগ ধরতে পারায় বেঁচেও গিয়েছেন। তবে, তিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়েছে তাঁকে।
[তাজমহলে শিব চালিশা পড়লে দোষ কোথায়, বিজেপি নেতার মন্তব্যে নয়া বিতর্ক]
বছর তিনেক আগে যাদবপুরের ৩৬ বছরের এক যুবক ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হওয়ায় তিনি এক রকম বিনা চিকিৎসাতেই মারা যান। ডেঙ্গুর ভরা বাজারে এই নতুন ‘শত্রু’ চিন্তা বাড়িয়েছে ডাক্তারদের। ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাসের মতো মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন, এই রোগ বেশ বিরল হলেও এ রাজ্যে বেশ কয়েকবার হানা দিয়েছে। প্রাণও কেড়েছে। সুতরাং সতর্ক হতে হবে। দুই চিকিৎসকই জানিয়েছেন, পাস্তুরাইজড নয় এমন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (চিজ, মাখন, ঘি, ছানা) থেকেই মূলত এই জীবাণুটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।
মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার নজিরও রয়েছে। এই রোগ সাধারণত গরু, ছাগল, ভেড়ার মতো গবাদি পশুদের মধ্যে হয়। কিন্তু প্রাণীদের থেকে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। যাকে ‘জুনোসিস’ বলা হয়। সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, স্ক্রাব টাইফাসও জুনোসিস।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ব্রুসেলা এক ধরনের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটিরিয়া মানুষের শরীরে ঢুকে নানা রকমের জটিলতা তৈরি করে। যার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ জ্বর। লিভার, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্রকেও অকেজা করে দিতে পারে। আশার কথা একটাই। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর নজির তেমন নেই। যদিও এডসের মতো যৌন সংসগের্র মাধ্যমে কিংবা মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে সংক্রামিত হয়। ডাক্তারবাবুদের ধন্দে ফেলেছে ব্রুসেলোসিসের উপসর্গগুলো। ডেঙ্গুর সঙ্গে এর অনেক মিল। তারা অবশ্য অভয় দিয়েছেন, সময়মতো অ্যান্টিবায়োটিক পড়লে এই রোগ সেরে যায়। কিন্তু ধরাটাই মুশকিল। কারণ ব্রুসেলোসিস নির্ণয়ের পরীক্ষা কলকাতায় হয় না।
গত বছর পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ ধরা পড়েছিস দুই শিশুর মধ্যে। তখনও ধন্দে পড়েছিলেন ডাক্তাররা। ভেবেছিলেন, রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে। পরে ভুল ভাঙে। পুরসভার চিকিৎসকদল হাসপাতালের সঙ্গে বৈঠক করে বুঝতে পারেন, এই রোগের জন্য দায়ী এক ধরনের পোকা। এ বছরও স্ক্রাব টাইফাস হানা দিয়েছে রাজে্য। এই রোগেরও ডেঙ্গুর সঙ্গে মিল রয়েছে। অজানা জ্বর নিয়ে চিকিৎসকমহলে এমনিতেই বিস্তর ধন্দ। এবার তা বাড়িয়ে দিল ব্রুসেলা।
[শৌচরত মহিলার ছবি তুলে গেরোয় বিজেপি নেতা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.