বাবুল হক, মালদহ: মালদহ জেলাজুড়েই এখন চলছে দেশি ব্রাউন সুগারের রমরমা কারবার। মাদকাসক্ত তরুণ-কিশোরদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। দু’দিন আগেই ওল্ড মালদহের সাহাপুরে নেশার বলি হয়েছে দুই কিশোর। কালিয়াচক থেকে ইংলিশবাজার শহর, এই ব্রাউন সুগার মিলছে সর্বত্রই বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। যদিও এই বেশি ব্রাউন সুগারের উৎসের খোঁজে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মালদহ জেলা পুলিশের এক কর্তা। পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় পোস্ত চাষ বন্ধ হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগেই। তবু কেন ‘দেশি’ ব্রাউন সুগারের রমরমা মালদহ জেলাজুড়ে?
[ভিন জাতে বিয়ে, পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে মেয়ে-জামাইয়ের গায়ে আগুন দিল বাবা]
এমন প্রশ্নই এবার উদ্বেগ বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্রাউন সুগারের রমরমা কারবার চলছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। এই মাদকের সুখটানে বুঁদ হচ্ছে স্কুল কলেজের পড়ুয়া থেকে এক শ্রেণির উঠতি কিশোর-যুবকরা। যা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবক মহল থেকে প্রশাসনও। ব্রাউন সুগারে আসক্ত বেশ কয়েকজন কিশোরকে ইতিমধ্যেই ইংলিশবাজারের চণ্ডীপুরের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দু’দিন আগেই জোড়া মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ওল্ড মালদহের সাহাপুরে। ওই দুই কিশোর নেশাই আসক্ত ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। মাদক সেবন না করতে পেরে এভাবেই কি আত্মহত্যা পড়ছে কিশোররা? উঠেছে এমন প্রশ্নও।
অভিযোগ উঠেছে, মালদহ জেলার কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর থানা এলাকার কয়েকটি গোপন ডেরায় দেশি ব্রাউন সুগার তৈরি হচ্ছে। কালিয়াচকের জালুয়াবাধাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই নাকি জেলাজুড়ে এই দেশি ব্রাউন সুগার ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই থানা এলাকার বিবিগ্রাম, বামনগ্রাম, মোজমপুর, শাহবাজপুর, সুজাপুর, ব্রহ্মত্তর, গয়েশবাড়ি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্রাউন সুগারের হোলসেল বিক্রেতা রয়েছে বলে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। যদিও এযাবৎ কেউ ধরা পড়েনি। তবে নেশাসক্ত কিশোরদের ধরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “হাজতে পুরে দিলে নেশাসক্তরা আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে। নখ দিয়ে নিজের শরীর ছিঁড়ে ফেলছে। ফলে পুলিশ সেই ঝুঁকি নিচ্ছে না। মাদক বিক্রেতাদের খোঁজে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
প্রশ্ন উঠেছে, পোস্ত চাষ একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মালদহ জেলায়। তা-ও কিভাবে খোলাবাজারে মিলছে ব্রাউন সুগার? ইংলিশবাজার শহর লাগোয়া ঘোড়াপির এলাকার এক অভিভাবক জানান, তাঁর ১৭ বছরের ছেলেটি পাশের রিজেন্ট পার্ক এলাকা থেকেই ব্রাউন সুগার সংগ্রহ করে সেবন করত। এখন তাঁর ছেলের চিকিৎসা চলছে বহরমপুরে। কালিয়াচকের বিবিগ্রামে মাত্র এক গ্রাম দেশি ব্রাউন সুগারের দাম নাকি ৬০০ টাকা। প্রত্যহ অন্তত ৩০০ টাকার অর্ধেক গ্রাম এই মাদক সেবন করছে উঠতি কিশোররা। মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক অশোক মোদক বলেন, “পোস্ত চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবু কেন ব্রাউন সুগার? আমরা সমস্যাটি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।”
কালিয়াচক থানার পুলিশের অনুমান, পুরণো আমলের পোস্ত চাষের আফিম আঠা মজুত রেখে থাকতে পারে মাদক কারবারিরা। সেই আফিম আঠা থেকেই সম্ভবত ব্রাউন সুগার তৈরি হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যেই কালিয়াচক, ইংলিশবাজার, মোথাবাড়ি ও বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ বেশ কয়েক কুইন্টাল আফিম আঠা বাজেয়াপ্ত করেছে। ধরপাকড়ও চলছে। মালদহের পুলিশ সুপার অজয় প্রসাদ বলেন, “সমস্যাটি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। কালিয়াচকেই এর উৎস হতে পারে বলে শুনেছি। পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।”
[‘অশান্তিতে জড়িও না’, বাবার পরামর্শে বীজপুরের বাইরে বেরলেন না শুভ্রাংশু]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.