ছবিতে আত্মঘাতী যুবক রাজু খাঁ।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: চোর ‘অপবাদ’-এ পুলিশের মামলা, অপমানে আত্মঘাতী যুবক। মৃতের নাম রাজু খাঁ। বাড়ি আসানসোলের কয়লাখনি এলাকা সালানপুরের ঘোলকেয়ারিতে। মঙ্গলবার রাতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন রাজু। তবে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে এক অডিও বার্তায় মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে যান। এই ঘটনায় এলাকায় চাপা উত্তেজনা থাকলেও সংবাদমাধ্যমের সামনে কেউই মুখ খোলেননি। ছেলের এহেন পরিণতিতে ভাষা হারিয়েছেন বাবা প্রদীপ খাঁ।
জানা গিয়েছে, চোরাই কয়লা পাচারের কাজ করতেন রাজু। চলতি মাসের ছ’তারিখে গাড়ি চুরির অভিযোগে রাজুকে ধরে নিয়ে যায় স্থানীয় রূপনারায়ণ ফাঁড়ির পুলিশ। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে রাজুর উপরে মানসিক অত্যাচার করা হয়। বারবার তাঁকে চোর প্রমাণের চেষ্টা করেন কর্তব্যরত পুলিশকর্তা। সেই সঙ্গে তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বলা হয়, তিনদিনের মধ্যে চোরাই গাড়ি ও গাড়ি চুরির চক্রের যাবতীয় তথ্য না দিলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। অডিও বার্তায় রাজুর প্রশ্ন, তিনি যদি চুরিই করে থাকেন। পুলিশের কাছে যদি সেই প্রমাণ থেকেও থাকে তাহলে তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হল না? বলা বাহুল্য, এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। পুলিশের জেরার মুখে রাজু বারবারই বলেছেন, তিনি চোরাই কয়লা পাচার করেন। এটা সত্যি। তবে একাজ তিনি একা নন, সালানপুরের অন্তত হাজার খানেক যুবক এই কাজ করেন। তাঁর বাড়িতে কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনটি গাড়িও রয়েছে। সেগুলি টাকা দিয়ে কেনা, চুরির গাড়ি নয়। যদিও ছ’তারিখে পুলিশ যখন তাঁকে ধরে তখন রাজুর কাছে বাইক ছিল। সেই সময় পুলিশ কাগজপত্র দেখতে চাইলেও রাজুর কাছে কিছু ছিল না। তখন গ্রেপ্তারির বদলে তাঁকে তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দেয় পুলিশ।
এদিকে গত রবিবার সময়সীমার মেয়াদ ফুরোলে থানায় গিয়েছিলেন রাজু। সেই সময় কর্তব্যরত পুলিশকর্তা জানান, রাজুর বিরুদ্ধে গাড়ি চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেখানে তাঁকে চুরি যাওয়া গাড়ির মেকানিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই খবরে আকাশ থেকে পড়েন ওই যুবক। গাড়ির কলকব্জা সম্পর্কে যার ধারণাই নেই। সেই তিনিই কিনা গাড়ির মেকানিক। অনেক কাকুতি মিনতিতেও পুলিশের মত বদলায়নি। চোরের অপবাদ নিয়ে বাড়ি ফেরেন রাজু। কিন্তু মন ভেঙে যায়। অবৈধ কয়লার কারবার করলেও চুরি করেননি। এবার গাড়ি চুরির মিথ্যে কেসের খবর চাউর হলে তাঁর বাবা-মা মুখ দেখাতে পারবেন না। বাবা রাস্তায় বেরলে সবাই বলবে ‘চোরের বাবা’। এই অপবাদ মানতে রাজি নন ওই যুবক। তিনি যে চুরি করেননি, তা প্রমাণ করতেই আত্মহননের পথ বেছে নিলেন। অডিও বার্তায় একথা বলেই আত্মঘাতী হন ওই যুবক। মঙ্গলবার তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত হলেও বিষয়টি নিয়ে কেউই মুখ খুলতে রাজি নন। অডিওবার্তায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন রাজু। যদিও সেই দায় নিতে নারাজ স্থানীয় নেতারা। তাঁদের দাবি, চুরি-চোরা কারবার, পাচারচক্র এসব দেখার দায় পুলিশের, রাজনৈতিক দলের নয়। পুলিশও মুখে কুলুপ এঁটেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.