Advertisement
Advertisement

Breaking News

২৫ বছর পর গ্রামে ফিরল ছেলে

২৫ বছর পর মা-ছেলের মিলন, গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া ছেলেকে ফেরাল লকডাউন

ছেলে বুঝি আর বেঁচে নেই, এমনই ভেবেছিলেন মা।

Boy returns to the village after 25 years during lockdown in Purulia
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 30, 2020 10:22 pm
  • Updated:May 30, 2020 11:32 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাবা মারা যাওয়ার পর স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদে
ঘর ছেড়েছিলেন ছেলে। কাজ নিয়েছিলেন গুজরাটের লোহা কাটার কারখানায়। তারপর পার হয়ে গিয়েছে এক বছর, দু’বছর, পাঁচ বছর করে আড়াই দশক। ছেলে ঘরে ফেরেননি। বহুবার চিঠি গিয়েছে তাঁর কর্মস্থলে। কোনও উত্তর আসেনি। এই দীর্ঘ সময় ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের শিরকা গ্রামের তাঁর মা আর প্রতিবেশীরা ভেবেই নিয়েছিলেন, ছেলে বোধহয় আর বেঁচে নেই। তবে তাঁদের ভাবনা ভেঙে ছেলে গ্রামে ফিরলেন। লকডাউনই তাঁকে গ্রামে ফেরাল। কিন্তু গ্রামের সেই বাস্তু ভিটে আজ পরিত্যক্ত। সেখানে আর থাকেন না মা। বাইরে থেকে ফেরায় করোনা সংক্রমণ এড়াতে তাঁর ঠিকানা এখন গ্রামের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে।

মনসুর হেমব্রম। বয়স প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর। সেই কুড়ি বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর, কাজের সন্ধানে গুজরাটের খেড়া জেলার আন্তরালকাপড়াগঞ্জে যান। সেখানেই লোহার কারখানায় কাজে যোগ দেন। তারপর রাজস্থান হয়ে বর্তমানে মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে লোহার কারখানায় কাজ করছিলেন। এই
কয়েক বছরে তাঁর মা, দাদা, গ্রামের মানুষজন বহুবার তাঁর কর্মস্থলে চিঠি লিখে বাড়ি ফিরে আসার কথা বলেন। কিন্তু মনসুর একটা চিঠিরও জবাব দেননি, ফিরেও আসেননি। এর মধ্যে তাঁদের পরিবারে অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তবু ছেলের আশায় ঘর আগলে বসে থাকেন মা। কিন্তু ছেলে ফিরলে তো! একটা সময়ে মা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যান, তাঁর ছোট ছেলে সত্যিই আর বেঁচে নেই!

Advertisement

[আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়াল, ২৪ ঘণ্টায় মৃত আরও সাত]

ফলে ভিটে ছেড়ে তাঁর ঠিকানা হয় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু এরপরেই ক্লাইম্যাক্স। লকডাউনে দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর সেই ছেলে গত মঙ্গলবার ফিরলেন গ্রামে। প্রথমে মনসুরকে কেউ চিনতেই পারেননি। পরিচয় দেওয়ার পর সকলে বুঝতে পারেন। মনুসেরর মা এখন থাকেন মেয়ের শ্বশুরবাড়ি, সুদূর ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের ভেলাগোড়ায়। ছেলে ফিরেছে, খবর পেয়ে চলে আসেন গ্রামে। সঙ্গে আসেন মেয়েও। ছেলেকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। অশ্রুসজল হয়ে ওঠে ছেলের চোখও।

[আরও পড়ুন: বর্ধমানে অস্ত্র কারখানার হদিশ পেল কলকাতা পুলিশের STF, গ্রেপ্তার ৫]

কিন্তু এতদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়েও বুকে জড়িয়ে ধরতে পারলেন না মা। ভিন রাজ্যে থেকে ফেরায় স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর মনসুরের ঠিকানা হয় গ্রামের শিরকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন। মনসুরের কথায়, “বাবা মারা যাওয়ার পর কাজে চলে আসায় আর ঘরে ফিরতে ইচ্ছে হয়নি। এভাবেই কখন যে পঁচিশটা বছর কেটে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি।” বৃদ্ধা মা, পরিবার-পরিজন, গ্রামের মানুষ চিঠি লিখে ঘরে ফিরে আসার কথা বলার পরেও? মনসুর বলেন, “বাবার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠত। বাড়ি গেলে মনটা আরও খারাপ হয়ে যেত। তাই কাজের মাঝেই ডুবে থাকতাম।” আর কাজে ডুবেই ঘর-সংসার থেকে দূরে ছিলেন। তবে লকডাউনই মা-ছেলেকে মিলিয়ে দিল। আড়াই দশক পর।

ছবি: অমিত সিং দেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement