নন্দন দত্ত, সিউড়ি: একদিকে ভোটের হাওয়া। নেতা মন্ত্রীদের ভাষণ, প্রচার, দেওয়াল লিখনে প্রস্তুতি রীতিমতো তুঙ্গে। সঙ্গে ভোটের প্রাক্কালে যথারীতি চলছে নেতা মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রথাও। কোথাও জল নেই, তো কোথাও আবার ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় না। প্রতিশ্রুতি আসে বছর ঘুরে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবারই। কিন্তু তা আর কোথাও গিয়ে পূরণ হয় না। তাই এটা চাই ওটা চাই করে, বছর বছর অরণ্যে রোদন না করে, তারা নিজেরাই পরস্পরের সাহায্য করে দিন গুজরান করছে। এমনই এক গ্রাম মুরারই ১ নম্বর ব্লকের ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী বোরুঙ্গা-জয়পুর। আর সেই গ্রামের বাসিন্দারাও অন্যের সন্তানের মুখে দুধ ভাত তুলে দিয়ে নিজেদের সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে এই গ্রাম। এমনই তারা। মানবিকতার এক অন্যরকম দৃষ্টান্তের প্রতিস্থাপন করল এই গ্রামের বাসিন্দারা। নিজেদের মুখে খাবার উঠুক কি না উঠুক, রোজ গবাদি পশুদের খাবার জোগাড় তাদের করতেই হয়। আর একদিকে, যখন খাবারের জোগান দিতে গিয়ে কিংবা নিজেদের খাবারটুকু জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই গ্রামের বাসিন্দাদের, তখন ভোট এল কি গেল, তাদের কিছু যায় আসে না! নিজেরা খাবারের জোগাড় না করতে পারলেও, গবাদিদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের দাবি তুলেছে এই গ্রামের বাসিন্দারা।
[আরও পড়ুন: ‘ড্রেন-উঠোন পরিষ্কারের ভোট নয় এটা’, প্রচারে বিজেপিকে কটাক্ষ মহুয়ার]
বোরুঙ্গা-জয়পুর। শুনে আলাদা দুটো গ্রাম মনে হলেও, আসলে তা একটাই গ্রাম। সেই গ্রামকে ভাগ করেছে দুই ভিন রাজ্য। এক দিকে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মুরারই। অন্যপ্রান্তে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলার মহেশপুর থানা। আসলে, এই দুই প্রান্তের বাসিন্দাদের পেশা দুধের ব্যবসা। কিংবা গবাদি পালনও বলা যেতে পারে। পরিবারে গরু ও মোষ পালন করে কেউ পাকাবাড়ি বানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য তেমন ফেরেনি অনেকেরই। কারণ, দুধকে কেন্দ্র করে কোনও পরিকল্পনাই করেনি এই দুই রাজ্যের প্রশাসকরা, এমনটাই দাবি তুলেছে গ্রামের দুধ বিক্রেতারা। গ্রামে পরিবার পিছু গড়ে দৈনিক দুধ হয় ১০-১৫ কেজি। ৩০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করে সেই টাকায় চলে সংসার। ইদানিং দুধ থেকে ছানা তৈরি করে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে দিয়ে এসে দু’পয়সার মুখ দেখছে এলাকার গোয়ালারা।
[আরও পড়ুন: পতাকা ছাড়াই প্রচার, ভোটের মরশুমে অন্য ছবি বাংলার এই গ্রামে]
বীরভূমের বোরুঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা, মহুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য জপহরি ঘোষ এপ্রসঙ্গে জানান এলাকার দুর্দশার কথা। তাঁর বলেন, “এখানে চাষ হয় না। কারণ পাথুরে এলাকা। সেচের জলের ব্যবস্থা নেই। তাই দুধের ব্যবসার উপর নির্ভরশীল গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামে জল নেই। চাষ নেই। মাস দুয়েক হল গ্রামের বাইরে গরু-মোষ চড়াতে হয়। সেখানেই দুধ বিক্রি করতে হয়। গ্রামের দুশো পরিবারের ব্যবসা এটাই।” গ্রামের বাসিন্দা আশিস ঘোষের তিনটি মোষ রয়েছে। প্রতিদিন ছয় কেজি দুধ হয়। গ্রাম থেকে আরও কিছু দুধ কিনে ছানা তৈরি করে পার্শ্ববর্তী রাজগ্রাম, মুরারই, চাতরার মিষ্টির দোকানে বিক্রি করে চলে তাঁর সংসার। একই বক্তব্য ওই গ্রামের প্রবীর ঘোষাল, রিন্টু ঘোষ, বাসুদেব ঘোষ, জয়দেব কোনাইদের। গ্রামবাসীরা জানান, “আগে গরু কিংবা মোষের বাচ্চা হলে সরকার থেকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হত। তাতে বাচ্চা হওয়ার পর ওই খাবার খেয়ে গরু-মোষ দুধ বেশি দিত। কিন্তু এখন আর তা দেওয়া হয় না।” তবে ঝাড়খণ্ডের গ্রাম জয়পুর-বোরুঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা, বিজেপি নেতা সুখেন ঘোষের অবস্থা ভালই। দুধের ব্যবসা করেই সমৃদ্ধি ফিরেছে তাঁর। মুরারই ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিনয় ঘোষ বলেন, “কিছু কিছু এলাকায় পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় না ঠিকই। আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। যাতে গ্রামীণ এলাকায় গরু মোষের জন্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়।” তাই এবারের নির্বাচনে তারা নিজেদের থেকেও গবাদির খাবার চাইবে।
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.