নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কেউ বলছে ‘উলোট পুরান’ বা কেউ বলছে, ‘ভূতের মুখে রাম নাম’৷ মদের গ্রাম নামেই এতকাল এই গ্রামকে চিনতেন অন্যান্য মানুষজন৷ প্রায় রোজই গ্রামের অবৈধ মদের ভাটি ভাঙতে অভিযান চালাত আবগারি দপ্তর। এখন সেই গ্রামেই মদের গন্ধে নেমে আসে জরিমানার খাঁড়া৷ এমনকি গোপনে কেউ মদ মজুত করলেও শাস্তির দেয় গ্রাম উন্নয়ন কমিটি। খবর দিতে পারলেই মেলে পুরষ্কার। গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের মাঠমহুলা গ্রাম। এই গ্রামই এখন হয়ে উঠেছে নেশামুক্তির আইকন৷
[মদ-জুয়ার প্রতিবাদের মাশুল, নৈহাটিতে নৃশংসভাবে খুন তৃণমূল কর্মী]
গ্রামে বাস করে তিনশোটি পরিবার। এতকাল তাদের অনেকেই চোলাই মদ তৈরি করত। মদের আসর বসত যত্রতত্র। বছর দশেক আগে ময়ূরেশ্বর থানার এক ওসির উদ্যোগে মদের কারবার বন্ধ হয়৷ কিন্তু তিনি বদলি হতে যেতেই ফের শুরু হয় অবৈধ মদের রমরমা৷ তবে এবার আর পুলিশ নয়, গ্রামের পরিবেশ ঠিক করতে এগিয়ে এসেছেন গ্রামবাসীরাই৷ তাঁরাই অবৈধ মদের কারবার বন্ধে অভিযানে নেমেছেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গ্রামে কেউ মদ তৈরি করলে বা মদ মজুত করলে দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা৷ এই বেআইনি কার্যকলাপ সংক্রান্ত খবর দিলেই মিলবে পাঁচশো টাকা পুরষ্কার।
এই টোটকাতে মিলছে ফলও, জানান গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেব ভাণ্ডারী, বিকাশ দাস, পঞ্চায়েত সদস্য অজয় মণ্ডল৷ তাঁরা বলেন, অবৈধ মদের কারবারের ফলে আগে অশান্তি লেগেই থাকত গ্রামে৷ তাই বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীরা অবৈধ মদের কারবার বন্ধে উদ্যোগী হয়েছেন৷ এক সময় এই চোলাই মদ বিক্রি করেই সংসার চালাতেন তারাপদ দাস, সূর্য দাস, পুলিশ হেমব্রম, তামবর মুর্মুরা। তাঁরা বলেন, আগে চোলাই মদের ব্যবসায় আয় ভালই হত। কিন্তু গ্রামে শান্তি ফেরাতে পেশা ছেড়েছেন তাঁরা৷ এখন তাঁদের কেউ মুদিখানার দোকান চালান বা কেউ দিনমজুরের কাজ করেন।
[সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ, বৃদ্ধা মাকে হাঁসুয়ার কোপ ছেলের]
গ্রামবাসীদের অনেকেই জানান, এই ফতোয়ার ফলে গ্রামে আর কেউ মদ বিক্রি করে না। মদের আসরও আর বসে না। জানা গিয়েছে, গ্রামের বাইরে কেউ মদ খেয়ে গ্রামে ঢুকতেই পারে। তবে বেচাল দেখলেই গুনতে হবে জরিমানা। মাঠমহুলা গ্রাম এখন হয়ে উঠেছে নেশামুক্তি অভিযানের আইকন৷ এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রামপুরহাটের মহকুমা শাসক স্মৃতিরঞ্জন মোহান্তি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.