সোমনাথ পাল, বনগাঁ: হাসপাতালের বেডে শুয়ে এক মহিলা৷ বছর দেড়েক আগে সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছেন তিনি৷ সন্তানও খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন মাকে, আবার মা-ও চাইছিলেন সন্তান ফিরে আসুক তাঁর কাছে৷ কিন্তু কেউই কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না৷ অবশেষে হাসপাতালের বেডে মা ও ছেলের দেখা হল৷ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ভেঙে পড়লেন কান্নায়৷ না, এ কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয়৷ বাস্তবের মাটিতে এই ঘটনার সাক্ষী রইল বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল৷
দিনটা ছিল ২০১৭ সালের ২৩ মে৷ নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা উমা বিশ্বাস সেদিন সকালে মেয়ের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন৷ মায়ের আর খোঁজ পাননি ছেলে অপূর্ব| বছর দেড়েক আগে বনগাঁ স্টেশন থেকে উমাদেবীকে উদ্ধার করে জিআরপি৷ উদ্ধারের সময় মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল বছর পঞ্চাশের ওই মহিলার৷ তাঁকে ভরতি করা হয় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে৷ স্মৃতিশক্তিই শুধু নয়, বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলেন উমা বিশ্বাস৷ অনেক চেষ্টা করেও তাঁর পরিবারেরও খোঁজ পাওয়া যায়নি পুলিশ| তবে চিকিৎসা থেমে থাকে| বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, মাস ছয়েক আদে আচমকাই কথা বলতে শুরু করেন উমাদেবী৷ ফের নতুন উদ্যমে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়৷ এবার উমা বিশ্বাসের চিকিৎসা শুরু করে মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞরা৷ অবশেষে মেলে সাফল্য৷ নিজের মুখেই নাম ও ঠিকানা জানান বছর পঞ্চাশের ওই মহিলা৷ তিনি জানান, তাঁর এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে| ব্যাস এইটুকু| আর কিছুই মনে পড়েনি উমার| মা আর ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে হবে, বদ্ধপরিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ| কিন্তু কৃষ্ণনগর তো অনেক বড় জায়গা. ঠিকানা মিলবে কীভাবে? নার্সরা সাহায্য নেন সোশ্যাল মিডিয়ার। ফেসবুকে নদিয়ার অপূর্বর খোঁজ শুরু হয়৷ ওই মহিলাকে দেখানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকা অপূর্ব নামে ছেলেদের৷ ফেসবুকে নিজের ছেলের ছবি দেখে চিনতে পারেন তিনি৷ আনন্দে কেঁদে ওঠেন উমাদেবী৷
তাতেও বাধে বিপত্তি| যোগাযোগ হবে কী করে? একে তো ২০১৫ সাল থেকে ফেসবুক বন্ধ অপূর্বর| আর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে যোগাযোগের কোনও নম্বর নেই| কিন্তু তাতেও আশা ছাড়েননি নার্সরা৷ অপূর্বকে ট্যাগ করে উমাদেবীর ছবি পোস্ট করা হয়৷ অপূর্বর ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বেশ কয়েকজনকেও ওই ছবি ট্যাগ করা হয়৷ আর তাতেই মিলল সাড়া| ওই পদক্ষেপেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোঁজ মেলে উমা চৌধুরীর ছেলে অপূর্বর| হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে চমকে ওঠেন তিনি | অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বনগাঁ হাসপাতালে দেখা হল মা ও ছেলের|
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.