জোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: দশ নয়, দেবীর ২ হাত। প্রতিমার পাশাপাশি বনগাঁর গোপালনগরের দাঁ পরিবারের পুজোর(Bonedi Barir Durga Puja) নিয়মেও রয়েছে অভিনবত্বের ছোঁয়া। এবার ৩০০ বছরে পড়ল এই পুজো। প্রতিবছর যার সাক্ষী হন বহু মানুষ।
চাঁদ সওদাগরের বংশধররা প্রথমে হুগলির বৈঁচিতে শুরু করেছিলেন পুজো। পরবর্তী সময়ে বনগাঁ মহকুমার গোপালনগরে এসে ব্যবসা শুরু করে দাঁ পরিবার। সেখানেই শুরু হয় কমলেকামিনী দুর্গার আরাধনা। প্রায় ২০০ বছর ধরে গোপালনগরে দাঁ পরিবারের সদস্যরা অসুরবিহীন দুর্গার পুজো করে আসছেন। কালক্রমে পুজোর জৌলুস কমলেও পরিবর্তন হয়নি আচার-আচরণের। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এখানে দেবীর দশ হাত নয়, দুটি হাত৷ এক হাতে সুমন্ত আর এক হাতে পদ্ম৷ কে এই সুমন্ত? নেপথ্যে রয়েছে কাহিনী।
পরিবারে প্রবীণ সদস্য বিশ্বনাথ দা বলেন, “চাঁদ সওদাগর বাণিজ্য করতে যাওয়ার পথে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে সমুদ্রের মধ্যে দেবীর দর্শন পেয়েছিলেন৷ এক রাজা সেই গল্প শুনে দেবী দর্শন পেতে চেয়েছিলেন৷ দেবীর দেখা পেতে রাজা চাঁদ সওদাগরকে নিয়ে সমুদ্রে গেলেও দর্শন পাননি। রাজা তখন রেগে চাঁদ সওদাগরকে বন্দি করে রাখেন৷ সেই সময়ে চাঁদ সওদাগরের পত্নী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তাঁর নাম রাখা হয় সুমন্ত সওদাগর। তিনি বড় হয়ে বাবার খোঁজে সেই রাজার কাছে যান৷ রাজার কাছে যাওয়ার সময় তিনিও সমুদ্রপথে দেবীর দর্শন পেয়েছিলেন। কিন্তু সুমন্তও রাজাকে সেই দেবীকে দেখাতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাজা তাঁকেও বন্দি করেন এবং বলির আদেশ দেন। রাজার জল্লাদদেরা সুমন্তকে বলি দিতে গেলে দেবী দুর্গা নিজে কমলেকামিনী রূপে আবির্ভাব হয়ে সুমন্তকে হাত ধরে টেনে তোলেন।
এর পর থেকেই কমলেকামিনী রূপে পূজিতা হন দেবী। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এখনও বাড়ির ঠাকুরদালানে হয় পুজো। বিসর্জনেও রয়েছে অন্য নিয়ম। দশমীর দিন আদিবাসীদের কাঁধে হয় প্রতিমা পরিক্রমা। এর পর বাড়ির পুকুরে হয় হয়। পুজোর দায়িত্ব এখন বর্তমান প্রজন্মের কাঁধে। পুজোর কটাদিন দূর-দুরান্ত থেকে আত্মীয়-পরিজনরা বাড়িতে৷ চলে দেদার খাওয়া দাওয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.