শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ঘড়ি দেখে নয়,সন্ধিপুজো শুরু হয় তামার পাত্র দেখে! কামান দেগে বা বন্দুক ফাটিয়ে নয় ভক্তদের মুখে মুখে সেই বার্তা পৌঁছয় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। কুলটির চক্রবর্তীদের বাড়িতে (Bonedi Barir Durga Puja) প্রায় আড়াইশো বছর ধরে কাশীপুর রাজাদের দেওয়া জলঘড়ি বা তামার পাত্র দেখে ঠিক করা হয় সন্ধিপুজোর নির্ঘণ্ট। আশ্চর্যজনক ভাবে পঞ্জিকার সঙ্গে সেই সময় মিলেও যায়। এই ঐতিহ্যই প্রতি বছর এখানে হাজার হাজার ভক্তকে টেনে আনে।
কী এই জল ঘড়ি বা তামি? পরিবারের প্রবীণতম কর্তারা জানান, কাশীপুর রাজাদের দেওয়া একটি কাঁসার সরাতে জল থাকে। সেই জলে ভাসানো হয় এক সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত তামার বাটি। প্রতি চব্বিশ মিনিটে সেই তামার বাটিটি কয়েকবার ডোবার পর অঙ্ক তৈরি করে সন্ধিকাল নির্ঘণ্ট তৈরি করেন এই পুজোর গ্রহাচার্য।
শুধু তাই নয় মিঠানির চক্রবর্তীদের মন্দির থেকে পাশের ধেমোমেন গ্রামের মন্দির পর্যন্ত ৫০ মিটার দূরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন ভক্তরা। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণের সময় নিস্তব্ধতা ভেঙে চক্রবর্তীদের দুর্গা মন্দির থেকে ‘সন্ধি-সন্ধি’ রব ওঠে। প্রথম ভক্ত সেই আওয়াজ শোনামাত্রই ‘সন্ধি-সন্ধি’ আওয়াজ তুলে ছুটতে থাকেন পাশের গ্রামের দিকে। তারও ৫০ মিটার দূরে আরেক ভক্ত সন্ধির ডাক শোনা মাত্র দেয় ছুট। বার্তা এভাবেই রিলে সিস্টেমের মাধ্যমে পৌঁছে যায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। মন্দিরে, মন্দিরে।
এইতো গেল সন্ধিপুজোর বিশেষত্ব। কিন্তু পুজো (Durga Puja) শুরু কীভাবে? পরিবার সূত্রের খবর প্রায় আড়াইশো বছর আগে পূর্বপুরুষ রামলোচন চক্রবর্তী স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। সেই মতো মান গাছের নিচে পাওয়া পিতলের দুর্গামূর্তিটিকে এনে প্রথম পুজো শুরু করেন।
এখানে মা দুর্গার রূপও আলাদা। প্রতিমা সাবেকি হলেও কার্তিক-গণেশের অবস্থান উলটো। মা দুর্গার ডানদিকে কার্তিক আর বামে গণপতি। দশমীর দিন বিসর্জনের আলাদা নিয়ম। বিদায় বেলায় মাকে দেওয়া হয় পোড়া মাছের ভোগ। আগে পশুবলি হলেও এখন তা বন্ধ। সেই বলির খড়্গ ধোওয়া জল খেলে নারীর বন্ধ্যাত্ব দূর হয় বলে বিশ্বাস ভক্তদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.