সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: নতুন করে সেজে উঠেছে ঠাকুর দালান। দেবীর মূর্তি তৈরিও শেষের পথে। পরিবারের কর্তাদের ব্যস্ততা চরমে। এবারে প্রায় ৩০০ বছরে পদার্পণ করল নদিয়ার মাটিয়ারী গ্রামের চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের পুজো (Bonedi Barir Durga Puja 2024)।
এখানে মায়ের রূপ সম্পূর্ণ আলাদা। দেবী দ্বিবাহু বিশিষ্ট। এক হাতে রয়েছে বালক শিব। মায়ের সঙ্গে নেই ছেলেমেয়ে। নেই অসুরও। রূপ অভয়া। প্রথম দিন থেকেই এই রূপেই পুজো হয়ে আসছে বলে জানিয়েছে পরিবার। এই পরিবারের আরও এক অদ্ভূত রীতি রয়েছে। দশমীর দিন ঠাকুরদালানে টিকটিকির দেখা মেলার পরই দেবীর বির্সজন হয়। টিকটিকি দেখাকে শুভলক্ষণ মনে করেন পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা।
পরিবারের রীতি মেনে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো হয়। বোধনের দিন ধুনুচি নাচের মাধ্যমে দুর্গা মাকে আহ্বান জানানো হয়। পুজোর বাকি দিনগুলি রীতি রেওয়াজ মেনে পুজো হয়। চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণীয় একটি অংশ হল বিসর্জনের আগে টিকটিকি দেখার প্রথা। যা স্থানীয়দের কাছে এক অদ্ভুত মাহাত্ম্যের নিদর্শন।
কী এই টিকটিকি দেখা? দশমীর দিন বিসর্জনের প্রস্তুতি চলার সময় পুরোহিতরা মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে মা দুর্গাকে বিদায় জানানোর আগে বিশেষ প্রার্থনা করেন, তখন সাদা টিকটিকি দেখার মুহূর্তটি ঘটতে হয়। সেই টিকটিকি দেখেই প্রতিমা নিরঞ্জনে যায়। অনেকে বিশ্বাস করেন, টিকটিকির উপস্থিতি মা দুর্গার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন যে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এই প্রথার উৎপত্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু জানা যায় না। তবে স্থানীয় বিশ্বাস এবং বংশ পরম্পরায় এই রীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। টিকটিকি না দেখার ঘটনাকে তারা অশুভ এবং উদ্বেগজনক ভাবে ব্যাখ্যা করেন। এটি এলাকাবাসীর আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের একটি গভীর প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় লোকেরা মনে করেন, যতদিন এই পুজো হবে, ততদিন টিকটিকি দেখার রীতি এবং এর মাহাত্ম্য অটুট থাকবে।
এই বাড়ির পুজো রামসীতা বাড়ির পুজো নামেও পরিচিত। কেন রামসীতা বাড়ির পুজো? বাড়ির সামনে পুজো দালানে রামসীতার প্রাচীন বিগ্রহ রয়েছে। রামনবমীতে বড় মেলা হয়। রামসীতা তাঁদের কুলদেবতাও বটে। সেই থেকে রামসীতা বাড়ির পুজো।
এই বাড়িতে রামসীতার মূর্তি থাকায় সব পুত্রের সঙ্গে রামশব্দটি যুক্ত রাখতেই হয়। পূর্ব পুরুষ বলরাম, রামমোহন, রামদাস, রামরঞ্জন, রামরেণু, রামজীবন ও রামদাস। বর্তমানে রামনারায়ণের পুত্র রামতনু এই পুজো করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.