সুমন করাতি, হুগলি: দালানে রং লেগেছে। পড়ন্ত বিকেলের কোমল রোদে চকচক করছে। নদীর ফিনফিনে হাওয়া মাথা দোলাচ্ছে ঘাসফুল। বাড়ির কর্তাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে বহুগুণ। বছর ঘুরে মা আসছেন হুগলির পাল বাড়িতে (Bonedi Barir Durga Puja 2024)।
মা আসছেন তো বটে। তবে কোনও মূর্তি পুজো হয় না এই বাড়িতে। পটচিত্রে আঁকা দেবীর রূপ পুজো করা হয়। শুধু তাই নয়। মায়ের ভোগে থাকে না কোনও অন্ন। কোনও কালে পশু বলি দেওয়া হয়নি। আজও হয় না।এমনকী ফলও ছেদন করার নিয়ম নেই এই বাড়িতে। কত বছরের এই পুজো? শুরুই বা কী করে?
পালবাড়ির অষ্টম প্রজন্ম জানাচ্ছে, ৪০০ বছর আগে এই পুজো শুরু করেন রাম পাল। তবে প্রথমে এই বাড়িতে দুর্গাপুজো হত না। তাঁদের কুলদেবতা রাধাকৃষ্ণ। সারা বছর সেই পুজো হয়। তার আবার আলাদা ইতিহাস রয়েছে, পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সাধু রাম পালকে কুলদেবতা হিসেবে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি উপহার দেন। নির্দেশ দেন পুজো করার। তবে আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় পালদের পূর্বপুরুষ সেই মূর্তি বন্ধ ঘরে রেখে দেন। এর পরই রাম পাল স্বপ্নাদেশ পান। কুলদেবতার পুজো করার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে । শুরু হয় রাধাকৃষ্ণের পুজো। এবং রামপাল ধীরে ধীরে বিপুল ধন-সম্পদের অধিকারী হন। তার পরই এই বাড়িতে শুরু দুর্গাপুজো।
পুজোর সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন বাড়ির ছেলেরা। ফলকাটা থেকে পুজোর নৈবেদ্য সবই সেজে ওঠে পুরুষের হাতে। বির্সজনের নিয়মও সম্পূর্ন আলাদা। যেহেতু দেবীর মূর্তি নেই তাই পটচিত্র পুজোর পর তা তুলে রাখা হয় পরের বছরের জন্য। এই বাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য আজও সমানভাবে পালিত হয়। যা বাংলার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পাল বাড়ির এক সদস্য বলে, ” পুজো প্রায় ৪০০ বছরের। আমাদের বাড়িতে মূর্তি পুজো হয় না। পুজোর দিনগুলোতে রাধাকৃষ্ণের মূর্তিও এক সঙ্গে পুজো করা হয়। দশমীর দিন আগে কুলদেবতাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার পর বিসর্জনের প্রস্তুতি।”
কাশফুলের মতো মেঘেদের আনাগোনা যত বাড়ছে, ব্যাকুল হয়ে উঠছে সদস্যদের মন। মা আসছেন। দেবী একা আসেন না নিয়ে আসেন বাড়ি থেকে দূরে থাকা আত্মীয়দেরও। সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন পালবাড়ির বাসিন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.