ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পোশাক বিধি মানেনি ছাত্রীরা, তাই স্কুল চলাকালীন প্যান্ট খুলে নেওয়া হল পড়ুয়াদের। বাধ্য হয়ে কয়েকঘণ্টা প্যান্ট ছাড়াই ক্লাসে বসে রইল ছাত্রীরা। ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অবিভাবকেরা। স্কুলের বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতন থানার দ্বারস্থও হয়েছেন অভিভাবকরা। যদিও তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল। ঘটনাটি নিন্দনীয় বললেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
অবিভাবকদের অভিযোগ, সোমবার প্রথম শ্রেণি থেকে থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বেশ কিছু ছাত্রী ঠান্ডার জন্য লেগিংস প্যান্ট পড়ে যায় স্কুলে যায়। যা বিদ্যালয়ের পোশাক বিধি বহির্ভূত। ফলে শিক্ষিকা ক্লাসে এসেই জানতে চান, ওই পোশাকে স্কুলে এসেছে তারা। প্রশ্নের কোনও সদুত্তর ছাত্রীরা দিতে না পারায় শ্রেণি শিক্ষিকা প্রথমে বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপালকে জানান। অভিযোগ, প্রিন্সিপালের নির্দেশে যেসব ছাত্রী লেগিংস পড়ে স্কুলে গিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের প্যান্ট খুলে রাখতে বাধ্য করেন শ্রেণি শিক্ষিকা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে অবিভাবকেরা। তাঁরা বলেন, “লেগিংস পরা যাবে কি না সেবিষয়ে স্কুলের তরফে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি।”
এই বিষয়ে অবিভাবক রাজেশ শর্মা বলেন, “বাড়িতে গিয়ে দেখি মেয়ে প্যান্ট পড়ে নেই। মেয়ের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, শ্রেণি শিক্ষিকা তার প্যান্ট খুলে নিয়েছে এবং সেই অবস্থায় তাঁকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এটা কী শিক্ষা?” একই বক্তব্য অবিভাবক বান্টি শর্মার। তিনি বলেন, “লেগিংস পড়ে যাওয়া যাবে কি না সে বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমার মেয়ে ভিতরে কোন প্যান্ট পড়ে যায়নি, তার পরেও ওর প্যান্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। গোটা দিন সেই অবস্থাতেই তাকে ক্লাস করতে হয়।” তাঁদের দাবি অবিলম্বে প্রিন্সিপালকে বিদ্যালয় থেকে সরাতে হবে।
জানা গিয়েছে, ঘটনার কথা জানতে পেরেই অবিভাবকরা শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ জানাতে যান। এই খবর পেয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও থানায় পৌঁছে যায়। কিন্তু ঘটনার পর দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ অভিভাবকদের। প্রশ্ন উঠেছে, সব জানার পরও কেন এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিল না পুলিশ? এই বিষয়ে স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, অবিভাবকরা বিদ্যালয়ে এসে একটি অভিযোগ করেছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছে। বিদ্যালয়ের একটি পোশাক বিধি আছে, কিছু ছাত্রী তা না মেনেই অন্য পোশাকে স্কুলে এসেছিল। তাই তাদের বলা হয়ে ছিল পোশাক পরিবর্তন করতে। তাঁর দাবি, পোশাক বিধি সম্পর্কে স্কুলের তরফে মৌখিকভাবে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। কিছু মানুষ বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করতে অপপ্রচার করছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটির কথা শুনেছি। তবে পুরো ঘটনা জানি না। সরকারের অধীন স্কুল হলে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে সব সময় তা সম্ভব হয় না। তবে প্রিন্সিপালের আচরণ পড়ুয়াদের উপর প্রভাব ফেললে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.