নন্দন দত্ত, সিউড়ি: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের খোঁজ! অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) রাইস মিলে হানা দিয়ে মোট ৬টি বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান পেলেন সিবিআই আধিকারিকরা। তবে এখানেই শেষ নয়। অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন সিউড়ির ব্যবসায়ী। তাঁর দাবি, টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা, বিলাসবহুল গাড়ি নিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তা সত্ত্বেও শেষমেশ কাজের বরাত পাননি বলেই জানান ওই ব্যবসায়ী।
বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বাসিন্দা অরূপ রতন ভট্টাচার্য এবং রামপুরহাটের প্রবীর মণ্ডল যৌথ উদ্যোগে লোকনাথ অটোমোবাইলস নামে ব্যবসা শুরু করেন। তিলপাড়া জলাধার থেকে বালি তোলার বরাত পেতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে ব্যবসায়ী প্রবীর মণ্ডলের দাবি, অনুব্রত মণ্ডল বরাত দেওয়ার নামে তাঁদের কাছ থেকে মোট ১০ কোটি টাকা চান। তবে বিপুল অর্থ তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। শেষমেশ ৫ কোটি ৫৬ লক্ষ নগদ টাকা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে বসে নগদ দেড় কোটি টাকা অনুব্রত নিজে হাতে নিয়েছিলেন। বাকি টাকা বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের হাতে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। ২০১৮ সালের ২১ মার্চ, অরূপ রতন ভট্টাচার্য নগদ টাকা দিয়েছিলেন তাঁদের।
প্রায় ৭০ বিঘা জমির উপর ভোলে ব্যোম রাইস মিলটি অবস্থিত। সূত্রের খবর, দলিলে নাম রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের স্ত্রী এবং মেয়ের। সিবিআই সূত্রে খবর, WB54U6666 নম্বর প্লেটওয়ালা Ford Endeavour পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে একটি হুড খোলা Mahindra Thar। গাড়িটির নম্বর WB4B6966। এই গাড়িটির মালিক অনুব্রতর আপ্তসহায়ক অর্ক দত্ত। মূল্য আনুমানিক ১৬ লক্ষ টাকা। Mahindra Alturas G4 গাড়িও রয়েছে। গাড়ির নম্বর WB54B9555। মূল্য আনুমানিক ৩২ লক্ষ টাকা। একটি Mahindra 500 গাড়িও পাওয়া গিয়েছে। গাড়িটির নম্বর WB54Z4176। এই গাড়িটি সুতীর্থ ট্রাস্টের। এছাড়া একটি UA047183 নম্বর প্লেটওয়ালা Tata Sumoও পাওয়া গিয়েছে।
ভোলে ব্যোম রাইস মিল থেকে পাওয়া Ford Endeavour গাড়িটির নম্বর WB54U6666। ওই গাড়িটি ব্যবসায়ী প্রবীর মণ্ডলের। ২০১৮ সালের বিশ্বকর্মা পুজোর দিন অনুব্রত মণ্ডলকে ৪৬ লক্ষ টাকা দামের ওই গাড়িটি তিনি দিয়েছিলেন বলেই দাবি ব্যবসায়ীর। নগদ কোটি কোটি টাকা, গাড়ি পাওয়ার পরেও ওই ব্যবসায়ীরা কাজের বরাত পাননি বলেই অভিযোগ। গত বছর মে-জুন মাসে ওই গাড়িটি ফেরত চান ব্যবসায়ী। তবে অনুব্রত মণ্ডল পালটা তাঁদের হুমকি দেয় বলে দাবি। ব্যবসায়ীর অভিযোগ, গাড়ি ফেরত চাইলে গাঁজা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’ অনুব্রত।
এদিকে, অনুব্রতর রাইস মিল থেকে সতীর্থ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের একটি এসইউভি গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। একসময় যে গাড়িটিতে লালবাতি লাগানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সতীর্থ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মলয় পীঠের দাবি, “এটি ট্রাস্টের গাড়ি। কলকাতা যাওয়ার সময় অনুব্রত মণ্ডল এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন। এই গাড়িটি অনুব্রত মণ্ডল কিনে নিতে চেয়েছিলেন। তারপর থেকে গাড়িটি ওই রাইস মিলেই রয়েছে।”
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে অনুব্রত মণ্ডলের রাইস মিলের কাছে যান সিবিআই আধিকারিকরা। কর্মীদের বাধা পেরিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট পর রাইস মিলে ঢোকেন আধিকারিকরা। রাইস মিলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সিবিআই। অনুব্রত মণ্ডল কিংবা তাঁর মেয়ে সুকন্যা রাইস মিলে আসতেন?কারা ডিউটি রস্টার ঠিক করতেন? নাইট শিফটে কাজ হত কিনা? ওই গাড়িগুলি রাইস মিলে শুধুই রাখা থাকত নাকি সেগুলি গরু পাচারে কাজে লাগানো হত? এমনই নানা তথ্যের খোঁজে সিবিআই। ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাইস মিলে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.