দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: চেন্নাইয়ে জাহাজ কোম্পানিতে উচ্চপদে যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ভিক্টর রায়ের। শনিবার চেন্নাইয়ের একটি হোটেলের বাথরুম থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ভিক্টরের দেহ উদ্ধার করে চেন্নাই পুলিশ। কিন্তু কীভাবে মৃত্যু হল প্রতিভাবান এই যুবকের? দানা বাঁধছে রহস্য। খবর পাওয়ার পর শনিবারই মৃতের এক দাদা ও দুই বন্ধু রওনা হয়েছেন চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্য।
উত্তরপাড়া কোতরং ঘোষ পাড়ার বাসিন্দা ভিক্টর রায় বরাবরই কৃতী ছাত্র। উলুবেড়িয়ার একটি কলেজ থেকে এমবিএ পাশ করে দু বছর আগে চেন্নাইয়ে আমাজনের উচ্চ পদস্থ অফিসার হিসেবে কাজে যোগ দেন। সেখানে দু’বছর কাজ করার পর চেন্নাইয়ে একটি জাহাজ কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পান ভিক্টর। নতুন কাজে যোগদানের আগে উত্তরপাড়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ভিক্টর। সোমবার কাজে যোগ দিয়ে চেন্নাইয়ের পালরাজ নগরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে শুরু করে ভিক্টর। শনিবার সেখানকার একটি হোটেলের বাথরুম থেকে ভিক্টরের দেহ উদ্ধার হয়।
মৃতের মা শীলা রায় জানান, ছেলে প্রত্যেক দিন অন্তত পাঁচ বার ফোন করে তাঁদের খোঁজ খবর নিত। শুক্রবার সারাদিন কোনও ফোন করেনি। সেদিন রাত ৯ টা ৪০ নাগাদ ফোনে ভিক্টর জানান যে, তাঁর শরীরটা খারাপ। সে ঘুমোবে। সেই শেষ কথা। এরপর আর তাঁদের কথা হয়নি। শনিবার সারা দিন ফোন রিং হয়ে গেলেও কেউ ফোন ধরেনি। সেদিন সন্ধে সাড়ে ৭ টা নাগাদ ভিক্টরের দিদি দীপা রায়চৌধুরির কাছে চেন্নাই পুলিশের তরফে একটি ফোন যায়। সেখানে তাঁকে জানানো হয় সে, হোটেলের বাথরুম থেকে গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় ভিক্টরের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ওই হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায় যে, শুক্রবার একটি যুবকের সঙ্গে হোটেলে গিয়েছিলেন ভিক্টর। শনিবার সকালে ওই ছেলেটিকে হোটেলের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। বেরোনোর সময় দরজা বন্ধ করে দিয়ে যায় সে। তবে ভিক্টরকে হোটেল থেকে বেরোতে দেখা যায় নি। সিসিটিভি ফুটেজে এটা স্পষ্ট যে, শুক্রবার রাতে ওই হোটেলের ঘরেই ভিক্টরের সঙ্গে এক যুবক ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, শুক্রবার ভিক্টর জানিয়েছিল সে অসুস্থ, তবে কেন তাঁর বন্ধু সে বিষয়টি হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানাল না? তবে খুনের উদ্দেশ্যেই কি ভিক্টরকে কিছু খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল? মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর তাকে বাথরুমের মধ্যে মেঝেতে গলায় দড়ি ফাঁস লাগিয়ে ফেলে রেখে দেওয়া হয় যাতে গোটা ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে গন্য হয়?
জানা গিয়েছে, যে ছেলেটি ভিক্টরের সঙ্গে হোটেলে গিয়েছিল ঘটনার পর থেকে তাঁকে হোটেলে দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে তবে কি ওই ছেলেটি গোটা ঘটনার সঙ্গে জড়িত? খুব দ্রুত কেরিয়ারের অনেকটা উঁচুতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভিক্টর, সেই কারণেই কি কারও শত্র্রু হয়ে উঠেছিলেন ওই যুবক? এরকম হাজারও প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেরাচ্ছেন মৃতের পরিবার ও তদন্তকারীরা। ছেলের মৃত্যুর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন রায় দম্পতি। খবর পেয়ে মৃতের বাড়িতে যান উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব। মৃতের পরিবারের পাশে থেকে তাঁদের সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন পুরপ্রধান। দিলীপবাবু জানান, এরকম একটা প্রতিভাবান ছেলের মৃত্যু একটা গোটা পরিবারের কাছে বিরাট বড় বিপর্যয়। আমরা চাই চেন্নাই পুলিশ প্রশাসন মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করুক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.