স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গু মোকাবিলায় কর্তব্যে কোনও অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না বলে কঠোর ভাষায় জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার ডেঙ্গুর প্রভাব অনেক বেশি একথা বিধানসভায় উল্লেখ করে সোমবার মমতা আহ্বান জানান, এই সময়ে রাজ্যের পাশে থাকা উচিত বিরোধীদের৷ ডেঙ্গু নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়৷ অন্যদিকে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুরসভা৷ এদিন বলা হয়েছে, জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষা না করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না৷ যে ডাক্তার দেবেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ রাজ্যও সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আতঙ্ক না ছড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে৷ মূলত বিধাননগর-সহ উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলার শহরাঞ্চলে খুব ভালভাবে মনিটরিং করতে নগরোন্নয়ন দফতরকেও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি এদিন বলেন, “জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষা করান৷ মশারি টাঙিয়ে শুতে যান৷” এরপরই সভায় উপস্থিত বাম পরিষদীয় দলনেতার উদ্দেশে সচেতনতার বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, “সুজনবাবু, আপনিও ফুল স্লিভ জামা পরুন৷”
সরকারের পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে৷ অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোটামুটিভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকে৷ সাবধান থাকতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “স্কুল-কলেজকে অনুরোধ করতে পারি, সচেতন করতে পারি৷ মানুষ সচেতন হয়েছে৷ চিকিৎসকের অভাব মেটাতে চেষ্টা করছি৷”
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার সামগ্রিক কাজের উল্লেখও করেছেন বিধানসভায়৷ সেই প্রসঙ্গেই কলকাতাকে মডেল হিসাবে মেনে চলার কথা তুলেছেন স্বাস্থ্য দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শশী পাঁজা৷ ২০০৮-০৯ সালে ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে তিস্তার জলে গাম্বুসিয়া মাছ ছাড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ তথ্য দিয়ে তিনি বোঝান, রাজ্যে এ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ৬ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে৷ দিল্লি, পাঞ্জাব, কেরল বা হরিয়ানার সঙ্গে তুলনাও টানেন তিনি৷ বাম জমানায় অজানা জ্বরে মৃত্যুকে খতিয়ে দেখা হত না বলেও সমালোচনা করেছেন৷
এদিকে, বিজয় বোস রোডের দুই শিশুর অজানা জ্বরে মৃত্যুর ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পথে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ৷ সোমবার পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে জানানো হয়, গত রবিবার ও এদিন সকালে সজনকুমার সাউ ও তার দাদা বিবেককুমার সাউয়ের মৃত্যু হয়েছে বিনা চিকিৎসায়৷ সজনের মৃত্যুর আগে তার পরিবার তিনজন স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে যান৷ সেই চিকিৎসকরা বিনা রক্ত পরীক্ষায় ওই শিশুটিকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ৷ এই অভিযোগের সপক্ষে পরিবারের কাছ থেকে ওই তিন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন চেয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর৷ যদি দেখা যায় কোনও রক্ত পরীক্ষা ও যথার্থ কারণ ছাড়া কোনও চিকিৎসক রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছেন তাহলে সেই প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে পুর স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারিশ পাঠানো হবে স্বাস্থ্য বিভাগে৷ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশও করা হবে৷ দ্রূত এবিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে পুর স্বাস্থ্য কর্তারা কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন৷ একই সঙ্গে মেডিক্যাল কাউন্সিলকেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে বলেও জানা গিয়েছে৷ কলকাতার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে খবর, গত সাতদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সজন সাউ (১২)৷ তিনজন স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পর শনিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷ এর পরও পরিবারের লোক জোর করে ওই শিশুটিকে খিদিরপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর দু’ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়৷ খবর পেয়েই রবিবার শিশুটির বাড়িতে যান পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল কি না তা জানতে চান৷ অথচ ওই শিশুটির বাড়ির ১০০ গজের মধ্যেই রয়েছে ৭১ ও ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথচ সেখানে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়নি৷ খবর দেওয়া হয়নি পুর স্বাস্থ্যকর্মীদেরও৷ এর পরই স্বাস্থ্যকর্মীরা জানতে পারেন ওই শিশুটির দাদা বিবেক সাউও জ্বরে আক্রান্ত৷ তার রক্ত পরীক্ষা করানোর জন্য পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিবারের লোককে জোরও করেন৷ পরিবারের লোকেরা রাজি হয়নি৷ ফিরে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ রাতেই বিবেকের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়৷ এসএসকেএমে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয়৷ মৃত্যুতে পরিবারের লোকেদের দায়িত্বও প্রশ্নের মুখে বলে দাবি স্বাস্থ্যকর্মীদের৷ স্বাস্থ্য কর্তাদের অভিযোগ, বহু চিকিৎসকই জাতীয় স্বাস্থ্য গাইড লাইন না মেনে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.