ধীমান রায়, কাটোয়া: গাছ কাটা যাবে না – কচিকাঁচাদের এই আবদারের কাছে নতিস্বীকার করতে হল বড়দের৷ গাছ বাঁচাতে বর্ধমানের গুসকরার প্রাথমিক পড়ুয়াদের লড়াই সার্থক৷ কচিকাঁচাদের ভাবাবেগকে উপেক্ষা করে বিডিও অফিসের সীমানাপ্রাচীর তৈরির জন্য প্রিয় কদমগাছটি না কেটে রেখেই দেওয়া হল৷
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ বিডিও অফিসের গায়ে গুসকরা পূর্বপাড়া প্রথমিক বিদ্যালয়ের কদমগাছটি অক্ষতই থাকবে। একথা জানিয়ে আউশগ্রাম ১ বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘অফিসের জায়গার ওপারেই রয়েছে স্কুলের সামনে ওই গাছটি। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজে গাছটি কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু স্কুলপড়ুয়াদের আবদারে গাছটিকে রেখে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আরও কিছু গাছ লাগিয়ে দেব।’
আউশগ্রাম ১ বিডিও অফিসের দক্ষিণে গুসকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২১১ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এই বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনেই রয়েছে প্রায় ২৪ বছরের পুরনো একটি বিশাল কদমগাছ। আউশগ্রাম ১ বিডিও অফিসের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজে এই গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার প্রস্তুতিও চলছিল। সেকথা জানতে পেরে পড়ুয়ারা আন্দোলনে নামে। তারা গাছ আঁকড়ে ধরে পণ করে, কোনওভাবেই স্কুলে তাদের একমাত্র বন্ধু কদমগাছটিকে কাটতে দেবে না। স্কুলের ওই কদমগাছ আঁকড়ে ধরে কচিকাঁচা পড়ুয়াদের কান্নকাটির ছবি-সহ খবর ‘সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন’ এ সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। আর গাছ বাঁচাতে শিশুদের এই আন্দোলন বিভিন্ন মহলকে রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে৷
জানা গিয়েছে, কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রশাসনের কাছে আরজি জানানো হয়, যাতে গুসকরার ওই স্কুল পড়ুয়াদের সদিচ্ছার মূল্য দেওয়া হয়। তারপরেই গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আউশগ্রাম ১ ব্লক প্রশাসন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় গাছপ্রেমী বলে পরিচিত শিক্ষক অরূপ চৌধুরি ও আবু আজাদরা বলেন, ‘কয়েকজন শিশু মিলে যে শিক্ষা আমাদের দিল তাতে আমাদের এবার হুঁশ ফেরা উচিত। বনভূমি রক্ষা করতে না পারলে আগামী দিনগুলি কতটা ভয়ঙ্কর, তা অন্তত এবার অনুমান করা উচিত সবার।’ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বভাবতই এতদিনের মনখারাপ করা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে গুসকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। শনিবার সুখবরটা পেয়ে তারা বলে, ‘তাহলে আমরা কদমতলাতেই কদম ফুল নিয়ে খেলতে পারব।’ আর ওদের এই খুশিটুকুই প্রশাসনের কাছে স্বস্তির৷
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.